পটুয়াখালী এলজিইডি‘র অনিয়ম-দুর্নীতি ও গাফলতিতে অন্তত ২৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের চুড়ান্ত বরাদ্দ ফেরত যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে “পটুয়াখালী-বরগুনা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের” মেয়াদ চলতি বছরের গত ২৫ জুন শেষ হয়েছে। যে কারণে অর্থ ধরে রাখতে কাগজপত্রে প্রকল্প সম্পাদন করেছেন এলজিইডি। কিন্তু এলজিইডি‘র সীমাহীন ঘুষ ও পারসেন্টিজ বাণিজ্যের দর কষাকষিতে এই বরাদ্দ ফেরত গেছে। অভিযোগ রয়েছে-কোন প্রতিষ্ঠান কাজ করেও নিয়মিত বিল পায়নি; আবার কাজ না করেও অনেকে চুড়ান্ত বিল নিয়েছে। দুর্নীতির আশ্রয়ে চুড়ান্ত দেখানো অধিকাংশ কাজের সিংহভাগ অর্থ এসডি মানি করেছে এলজিইডি। এসডি মানি হওয়া এসকল কাজ গুলো আদৌ বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে? এসডি মানির এই অর্থ পরবর্তীতে লোপাট হবে বলে দাবি অনেকের। এমন পরিস্থিতিতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানও দুশ্চিন্তা পড়েছে। অপরদিকে আলোচ্য এঘটনা ধামাচাপা দিতে এলজিইডি ও সাধারন ঠিকাদার গনমাধ্যমে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে।
এঅভিযোগ ভুয়া অসত্য দাবি করে পটুয়াখালী এলজিইডির র্নিবাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ লতিফ হোসেন বলেন-অভিযোগকারীকে আমার সামনে আনেন; সত্য-মিথ্যা পরে দেখবো; আগে তার নাম ঠিকানা দেন, কে অভিযোগ করেছে। বাস্তবে নয়, কাগজপত্রে প্রকল্প চুড়ান্ত হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন-আগে অভিযোগকারী লাগবে, পরে প্রশ্নের উত্তর দেবো। তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী মহির উদ্দিন শেখ বলেন-নানা কারণে কাজ গুলো ডিলে হয়েছে, এসব নিউজ হলে সকলে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করছি। জেলা হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসিন বলেন-নিয়ম অনুযায়ী ২৫ জুন রাত ১২টার পর সার্ভার বন্ধ হয়েছে। এর পূর্বে অনেকে বিল নিয়েছে। এখানে আমাদের গাফিলতি ছিলনা। এসডি মানি সম্পর্কে কথা বলতে নারাজ তিনি।
অনুসন্ধান ও সুত্র বলছে-২০১৭-১৮ অর্থ বছরে পটুয়াখালী-বরগুনা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পটুয়াখালীতে প্রায় সাড়ে ৫শ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক ও কালভার্ট নির্মান কাজ শুরু করে এলজিইডি। র্নিধারিত সময়ে এ কাজ গুলো বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে কয়েক দফা সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু এলজিইডির প্রভাবশালি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গুলোকে অগ্রিম বিল দেয়ায় কাজ বাস্তবায়নে ধীরগতি শুরু হয়। পরবর্তীতে ২২-২৩ অর্থ বছরের ২৫ জুন পর্যন্ত মেয়াদ র্নিধারন হয়। চুড়ান্ত সময়ে এই কাজ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এলজিইডি ও কতিপয় ঠিকাদার অনৈতিক সুবিধা নিতে চলে দর কষাকষি। এলজিইডি ও ঠিকাদারের আধা-আধা ভাগাভাগির চুক্তিকে প্রকল্প সম্পাদন দেখানো হয়। ভাগাভাগি নিয়ে দর কষাকষির এক পর্যায় চুড়ান্ত বিল প্রস্তুত ও দাখিলে গাফিলতি ঘটে। যে কারণে ২৮টি প্রকল্পের প্রায় ৩০ কোটি টাকা ফেরত যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে-২০২০-২১ অর্থ বছরে মির্জাগঞ্জ উপজেলা সিকদার বাড়ী সামনে সড়ক নির্মান কাজ শুরু হলেও বর্তমান সময় পর্যন্ত ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। যে কারণে ওই কাজকে কাগজপত্রে সম্পাদন করেছে এলজিইডি। বাউফল উপজেলার কাছিপাড়া এলাকার বৌলতলী বাজার ব্রীজ থেকে ৩ কিলোমিটার সড়ক-কালভার্ট নির্মান ২০১৮ সালে শুরু হলেও ৬০ শতাংশ হয়েছে। এ কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ায় কাগজপত্রে সম্পাদন করেছেন এলজিইডি। কলাপাড়া উপজেলার আলীপুর থেকে চাপলিবাজার পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মান শেষ হয়েছে চলতি মাসে। অথচ কাগজপত্রে প্রকল্প সম্পাদন করে ঠিকাদারকে আগেই বিল দিয়েছে এলজিইডি। একই ভাবে একাধিক কাজকে কাগজপত্রে শতভাগ বাস্তবায়ন দেখিয়ে চুড়ান্ত বিল প্রস্তুত করে হিসাব রক্ষন কার্যালয়ে পাঠান এলজিইডি। কিন্তু র্নিধারিত সময়ে বিল প্রস্তুত ও দাখিলে ব্যর্থ হলে অর্থ ছাড় হয়নি।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একাধিক ঠিকাদারের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ-জুনের প্রথম দিকে কাজ শেষ হয়। চুড়ান্ত বিলের ফাইলপত্র উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে ছাড়াতে টেবিল-টু টেবিল অগ্রিম পারসেন্টিজ দিয়ে জেলা কার্যালয়ে আসলে র্নিবাহী প্রকৌশলী থেকে শুরু করে টেবিল টু টেবিল অগ্রিম পারসেন্টিজ নিয়ে চলে দরকষাকষি। যে কারণে বিল প্রস্তুতের কার্যক্রম স্থগিত হয়। এছাড়াও নির্মান সামগ্রীর মূল্য নিম্নমুখি থাকায় কাজ উঠাতে হিমশিম খেতে হয়। এরপর কাজের মান নির্নয়ে ল্যাব টেকনিশিয়ান প্রত্যয়ন দিতে অতিরিক্ত টাকা নেন। ল্যাবকে টাকা না দিলে তারা ভুলভাল রির্পোট দিয়ে ঠিকাদারকে বিপদে ফেলে।
পটুয়াখালী সদর উপজেলা প্রকৌশলী আহম্মেদ আলী ও কলাপাড়া উপজেলা প্রকৌশলী ফয়সাল রাঢ়ির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে ভুক্তভোগীরা বলেন-জুনের প্রথম দিকে কাজ শেষ হয়েছে। তারা অতিরিক্ত অগ্রিম পারসেন্টিজ দাবি করে বিল আটকে দেন। ধারকর্জ করে তাদের দাবি মিটিয়ে বিল নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে পৌছালে সেখানে দ্বিতীয় দফা শুরু হয় দরকষাকষি। র্নিবাহী প্রকৌশলী থেকে শুরু করে টেবিল টু টেবিল পারসেন্টিজ দিয়ে ২৫ জুন রাতে বিল ছাড়াতে হয়েছে; এরপর বিল নিয়ে হিসাব রক্ষন কার্যালয়ে গেলে তারা বলেন সার্ভার বন্ধ হয়ে গেছে।
আর্থিক লেনদেন আর টেবিলে টেবিলে সংশ্লিষ্টদের ক্ষমতার দাপটে সাধারণ ঠিকাদাররা হয়ে পড়েন নিরুপায়। আমাদের নাম মিডিয়ায় প্রকাশ পেলে আমাদের লাইসেন্স বাতিল হবে, কাজ বাতিল হবে। পরিনাম আমাদের ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিতে হবে।