দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার রামেশ্বরপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আয়ার সঙ্গে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভসহ মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।
একই দাবিতে এলাকাবাসীর গণস্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতির কাছে দিয়েছেন।
দুপুর ১২টার দিকে এলাকাবাসীর ব্যানারে ছাত্র, অভিভাবকসহ এলাকাবাসী রামেশ্বরপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আয়ার সঙ্গে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দন কুমার রায় অনৈতিক কাজে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ এনে তাকে বিদ্যালয় থেকে অপসারণের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিলসহ উপজেলা পরিষদ চত্বরে সমবেত হয়ে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে এলাকাবাসীর পক্ষে বক্তব্য রাখেন মিলন চন্দ্র রায়, সুলতান মাহমুদ, চয়ন রায়, বিপুল কুমার রায়, জয়দেব রায় প্রমুখ। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ওই বিদ্যালয়য়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখে ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী পল্লব চন্দ্র রায়, প্রাক্তণ শিক্ষার্থী চয়ন চন্দ্র রায়, জীবন রায় প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, প্রধান শিক্ষক চন্দন কুমার রায় গত সোমবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গাছে পানি দেওয়ার কথা বলে স্কুলের নবনিয়োগপ্রাপ্ত আয়া রীতা রানী রায় ইতিকে বিদ্যালয়ে ডেকে আনেন। পরে প্রধান শিক্ষক ওই আয়ার সঙ্গে বিদ্যালয়ের টয়লেটে অনৈতিক কর্মকা-ে লিপ্ত হলে বিষয়টি স্থানীয় যুবক চয়ন চন্দ্র রায় দেখে চিৎকার শুরু করেন। পরে স্থানীয়রা ছুটে আসলে ওই আয়া ও প্রধান শিক্ষক বিষয়টি অস্বীকার করেন। ইতোপূর্বেও প্রধান শিক্ষকের অত্যাচারে একজন নারী শিক্ষক পদত্যাগ করে বিদ্যালয় ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। এ কারণে অভিযোগটি তদন্ত সাপেক্ষে প্রধান শিক্ষকে অপসারনের দাবিতে এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন।
ওই আয়া রীতা রানী রায় ইতির ছেলে প্রান্ত রায় কৌশিক জানিয়েছেন, তার মায়ের সাথে ওই প্রধান শিক্ষকের অবৈধ অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে।
অভিযুক্ত আয়া রীতা রানী রায় ইতি বলেন, আমি সাংসারিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। অভাব অনটনে দিন কাটছিল। ওই স্কুলে নিয়োগের পর আমার আর্থিক উন্নতি দেখে এলাকাবাসীর সহ্য হচ্ছে না। তারা আমাকে হেয়পতিপন্ন করার জন্য এধরণের মিথ্যা ও বানোয়াট ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা সাজাচ্ছে। ঘটনার দিন আমাকে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে ডাকেন যে, বিদ্যালয়ে গাছ আনা হয়েছে সেগুলোতে পানি দিতে হবে। আমি সেখানে যাই এবং পানি দেই। পরে প্রধান শিক্ষক আবারো পানি দিতে বললে আমি রাগ হয়ে স্কুল থেকে বেড়িয়ে যাই। তখন ওই যুবক চয়ন রায় আমাকে বলে, আপনি কি করলেন টয়লেটে প্রধান শিক্ষকের সাথে। আমি বলি কি করেছি? পরে প্রধান শিক্ষককে ডাকলে ওই যুবক নিজের ভুল স্বীকার করে। পরে আমি বাড়ী চলে আসি। আমাকে সামাজিকভাবে মানক্ষুণœ করার জন্য এলাকার কিছু ব্যক্তি মিথ্যা, বানোয়াট কথা রটাচ্ছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক চন্দন কুমার রায় বলেন, ওইদিন সন্ধ্যায় বিদ্যালয়ে গাছ আনা হয়। বিদ্যালয়ের দুইজন আয়াকেই বিদ্যালয়ে ডাকা হয়। রীতা রানী রায় ইতি এসে গাছে পানি দিয়ে বাড়ি চলে যাওয়ার সময় চয়ন রায় নামের স্থানীয় যুবক রীতা রানী রায় ইতিকে উল্টাপাল্টা কথা বলে। অবশ্য পরে ওই যুবক তার কাছে ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছে। পরদিন মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) শুনতে পান এলাকাবাসী এ বিষয়ে মিটিং করছে। অনৈতিক কর্মকা-ে লিপ্ত থাকার বিষয়টি যে ছেলে দেখেছে সে তখন কেন ছবি কিংবা ভিডিও করল না? ওর কাছে তো স্মার্ট ফোন ছিল। আয়াও তো বলছে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এটি সম্পূর্ণ পারিবারিক ও পূর্বের জের ধরে আমাকে চক্রান্তমূলকভাবে ফাঁসানো হচ্ছে। সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এ ধরনের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক দোষিদের শাস্তি দাবি করেন প্রধান শিক্ষক।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুর আলম বলেন, এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ওয়াসিকুল ইসলাম বলেন, ভিডিও ফুটেজ যাচাই ও তদন্ত করে বিধি মোতাবেক যে ব্যবস্থাগ্রহণ করা দরকার তা গ্রহণ করা হবে।