নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল দখলকে কেন্দ্র করে শুক্রবার বেলা এগারোটার দিকে শ্রমিক ইউনিয়নের দুই গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় হামলা-সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বাস টার্মিনালের ভিতরের এ ঘটনায় উভয়পক্ষের কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
অপরদিকে বাস টার্মিনালে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় শুক্রবার দুপুর একটা পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পরেছিলেন দূর দূরান্তের যাত্রীরা। এর আগে সকাল ১০টার দিকে সদ্যঘোষিত মহানগর শ্রমিক লীগের কমিটি বাতিলের দাবিতে বাস টার্মিনাল সংলগ্ন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিক লীগের সদ্য সাবেক কমিটির সভাপতি ও নবনির্বাচিত সিটি মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের সমর্থক আফতাব হোসেন গ্রুপের লোকজনে। পরে জনগণের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে ১৫ মিনিট পরে বিক্ষুব্ধরা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন, বিদায়ী সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারীদের নিয়ে মহানগর শ্রমিক লীগের কমিটি ঘোষণার পর শুক্রবার সকাল থেকে উত্যপ্ত হয়ে ওঠে বরিশাল নগরী। নবনির্বাচিত সিটি মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের অনুসারীরা ঘোষিত ওই কমিটিকে বির্তকিত কমিটি আখ্যাদিয়ে অনতিবিলম্বে কমিটি বিলুপ্ত করে ত্যাগী নেতাকর্মীদের নিয়ে কমিটি গঠণের দাবি জানিয়ে শুক্রবার সকালে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন। এরমধ্যে বেলা এগারোটার দিকে বিদায়ী সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ পন্থী কাশিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন লিটন মোল্লা মিছিল নিয়ে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে প্রবেশ করে টার্মিনাল দখলের চেষ্টা করেন। এ সময় প্রতিরোধ গড়ে তোলেন নবনির্বাচিত সিটি মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের অনুসারী আফতাব হোসেনের সমর্থকরা। একপর্যায়ে দুইগ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সূত্রে আরও জানা গেছে, টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে কামাল হোসেন লিটন মোল্লার গ্রুপের লোকজনে সড়ক অবরোধ করলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
মহানগর শ্রমিক লীগের সদ্য সাবেক সভাপতি ও নবনির্বাচিত সিটি মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের সমর্থক আফতাব হোসেন বলেন, সদ্য সিটি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা নেতাকর্মীদের পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকি দিয়ে মারধর করে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রইজ আহম্মেদ মান্না। যেকারণে মান্না গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাভোগও করেছে। ওই ঘটনার পর কেন্দ্র থেকে মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। আফতাফ হোসেন আরও বলেন, সেই বিতর্কিত ছাত্রলীগ নেতা মান্নাকে দিয়ে মহানগর শ্রমিক লীগের কমিটি গঠণ করা হয়েছে। কারণ মান্না মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আব্দুল্লাহর ঘনিষ্ঠ অনুসারী। আমরা ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে ঘোষিত পকেট কমিটির বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদ জানালে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে সাদিক পন্থী লোকজনে। এতে আমাদের প্রায় ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
অপরদিকে সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী কামাল হোসেন লিটন মোল্লা বাস টার্মিনাল ছেড়ে চলে যাওয়ায় এবং তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে লিটন মোল্লার গ্রুপের একাধিক কর্মীরা জানিয়েছেন, তারা ছয় দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করার জন্য নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে গেলে নবনির্বাচিত সিটি মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের অনুসারী আফতাব হোসেনের লোকজন তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এতে তাদের ১০জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) এবিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের বলেন, বাস টার্মিনালে সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় এখনও কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বাস টার্মিনাল এলাকায় ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনার পর নবনির্বাচিত সিটি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে সিটি করপোরেশনের একাধিক কাউন্সিলর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মালিক ও শ্রমিকদের সাথে কথা বলেন। এ সময় তারা শ্রমিকদের কারো প্রতারণা কিংবা উস্কানিতে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহবান করেন। পাশাপাশি সিটি মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত দায়িত্বগ্রহণের পর আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকদের সকল দাবি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলেও জানিয়েছেন। আর সেই সময় পর্যন্ত সবাইকে শান্ত থাকার আহবান করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৮ জুলাই বরিশাল মহানগর শ্রমিক লীগের ২৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগ। এতে পরিমল চন্দ্র দাসকে সভাপতি ও মহানগর ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক রইজ আহম্মেদ মান্নাকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠণ করা হয়। ঘোষিত কমিটি বাতিল করে দলের ত্যাগী, নির্যাতিত ও যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্ময়ে কমিটি গঠনের দাবিতে শুক্রবার সকালে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে প্রতিবাদ জানানোর সময় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।