আমন চাষ নিয়ে রাউজানে কৃষকদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। আমনের ভরা মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় চরম হতাশায় রয়েছেন হাজার হাজার কৃষক। মৌসুম দ্রুত চলে যাওয়ায় বেশির ভাগ কৃষক সেচ দিয়ে আমন লাগানো শুরু করেছেন। এ কারণে চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে কৃষি অফিস। এ বছর ২২/২৩ অর্থ বছরে রাউজানে কৃষি বিভাগ আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এক ১২ হাজার ১ শত ১০ হেক্টর। এর মধ্য হাইব্রীড ৯ শত ৮০ হেক্টও, স্থানীয় ২ শত ১০ হেক্টর। বাকি ১০ হাজার ৯ শত ২০ হেক্টর উপশী জাতের চাষাবাদ হিসেব নির্ধারন করা হয়। গত বছর রাউজানে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১২ হাজার ১০ হেক্টও ছিল গত ২১/২২ অর্থ বছর। সেই সময়ে লক্ষমাত্রা পূর্ন হয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস জানান। চলতি আমন মৌসুমে রাউজানে বৃষ্টি হচ্ছে না বললেই চলে। তার মানে এ বছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অর্ধেকের বেশি কমেছে। কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে আমন ধান চাষের ভরা মৌসুম। রাউজান উপজেলায় কৃষক কাঙ্কিত বৃষ্টিপাতের দেখা পাচ্ছেন না। জমিতে বৃষ্টির পানি না জমার কারণে আমন আবাদ ঠিকমতো শুরু করতে পারছেন না চাষিরা। অথচ শ্রাবণ মাসের এই সময়ে ধান রোপণ নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা চাষিরা। কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাউজান উপজেলায় কৃষক সাধারণত হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় জাতের ধান চাষ করে থাকেন। রাউজানের বিভিন্ন এলাকার চাষিরা জানিয়েছেন, আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে সাধারণত বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করে আমন চাষে নামেন তারা। এ কারণে এই আবাদে তাদের সেচ খরচ কম হয়। কিন্তু এ বছর আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে বৃষ্টির দেখা না পেয়ে চাষিরা রীতিমতো হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে পানির জন্য হাহাকার চলছে। আবার অনেকেই বৃষ্টির অপেক্ষায় না থেকে অনেকেই স্যালো মেশিনের পানি দিয়ে ধানের চারা রোপণের কাজ শুরু করেছেন। রাউজান উপজেলা সদরের খাশখালী খাল এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেচের পানি দিয়ে আমন রোপণের দৃশ্য দেখা যায়। তবে চাষিরা হতাশ। সেচ দিয়ে আমন লাগানোর কারণে খরচ অনেক বেশি পড়বে বলে আসাদুল ইসলাম নামে একজন কৃষক জানান। এ দিকে অনাবৃষ্টিতে এ বছর আমন আবাদ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছে কৃষিবিভাগ। কর্মকর্তারা বলছেন, শুধু রাউজানে না প্রয়োজনীয় বৃষ্টির অভাবে বিভিন্ন জায়গায় আমন আবাদে স্থবির অবস্থা বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত আমন ধান রোপণ করা যাবে। সামনে বৃষ্টি হতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস বলছে। তখন হয়তো সঙ্কট কেটে যাবে। তারা একপ্রকার দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। শেষ পর্যন্ত আবাদ তুলতে পারবেন কি না, তা নিয়ে তারা রীতিমতো সন্দিহান। চলতি আমন মৌসুমে চাহিদামতো বৃষ্টি না হওয়ায় রাউজানের কৃষাণ-কৃষাণীরা শেষ পর্যন্ত এসব স্যালো মেশিনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। এ দিকে কৃষাণ-কৃষাণীরা বৃষ্টির জন্য হাহাকার করছেন। পানির অভাবে অনেক চাষি মাঠে নামতে পারছেন না। যে সময় আমন চাষ নিয়ে কৃষকের ব্যস্ত থাকার কথা, ঠিক সেই সময় অলস সময় পার করেছেন তারা। নুরুল ইসলাম নামে এক কৃষক বলেন, স্যালো মেশিনের ওপর নির্ভর করে বোরো আবাদ করতে হয়। কিন্তু এ বছর আমনেও সেচ দিতে হচ্ছে। এসব বিষয়ে জানতে রাউজান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুম কবির বলেন, এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় বিপাকে পড়েছে আমন চাষিরা। এতে অনেকে আমন চাষবাদের জন্য বীজ তলাও প্রস্তুত (চারা)। এসব বীজ তলা থেকে (চারা) ৪৫ দিনের মধ্য জমিতে রোপন করা না হলে, এ বীজ (চারা) ও নষ্ট হবে। যার কারণে এবারের আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও চাষবাদ নিয়ে আমরাও শঙ্কার মধ্য আছি। তবে কৃষক-কৃষানীদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে বলে তিনি জানান।