ঝালকাঠিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসার স্মৃতি নামে যাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮'র ৯৮/১০৫ ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঝালকাঠি থানার মামলা নং ১৪। রোববার রাতে ঝালকাঠি সদর থানার এসআই সুশংকর বাদী হয়ে ড্রাইভারসহ তিনজনের নামে মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা পলাতক রয়েছে। ঝালকাঠি জেলা পুলিশ সুপার মো:আফরুজুল হক টুটুল সাড়ে ১১ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরো জানান নিহত বা আহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে কেহ মামলা না করায় পুলিশের রাতে পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন, বাসের চালক মোহন (৪০), সুপারভাইজার মিজান (৩০) ও সহকারী আকাশ (১৭)।
রোববার সন্ধ্যার পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু এমপি। পরে তিনি হাসপাতালে গিয়ে আহতদের চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন এবং তাদের কাছে ঘটনার বর্ণনা শুনেন। দোষীদের আইনের আওতায় আনতে নির্দেশ দেন।
গত শনিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে ভান্ডারিয়া থেকে বরিশাল যাওয়ার পথে ঝালকাঠির গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের ছত্রকান্দা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসটি উল্টে পানিতে পড়ে গিয়ে ১৭ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৮ জন নারী, ৬ জন পুরুষ ও ৩ জন শিশু। এ ঘটনায় আরও ৩৫ জনকে আহত হয়েছেন। এদিকে দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘটনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মামন শিবলিকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
সড়কের পার্শে পুকুর খনন কারীকে আসামি না করায় ক্ষোভ:
ঝালকাঠিতে স্মরনকালের ভয়াবহ র্দূঘটনায় ১৭ বাসযাত্রী নিহতের ৩৬ ঘন্টা পর ৩জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হলেও আসামি তালিকা নিয়ে স্থানীয় মহলে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের দায়েরকৃত মামলায় চালক, সুপারভাইজার, হেলপার আসামি হলেও বাস মালিক ও মহাসড়কের জমি দখল করে পুকুর খননকারীকে আসামি না করায় থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এ প্রশ্ন উঠেছে। রোববার রাতে সাড়ে ১০টায় এসআই সুশংকর মল্লিক বাদী হয়ে এ মামলা (নং-১৪) দায়েরের সংবাদ প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ এখোন পর্যন্ত কোন আসামীকে গ্রেপ্তার করতে না পারলেও অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে।
অন্যদিকে দূর্ঘটনাস্থলের মাত্র ৫০ গজ দূরে গাবখান-ধানসিড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বররা অভিযোগ করে বলেন, আঞ্চলিক মহাসড়কের মাত্র ৩ফুট দূরে সড়ক বিভাগের জায়গায় অবৈধভাবে পুকুর খনন কালে স্থানীয় প্রভাবশালী জামাল হাওলাদারের ভাই মন্টু হাওলাদার কে নিষেধ করা হলেও সে অগ্রাহ্য করে। যে কারণে এই সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত ১৭জনই পানিতে ডুবে ঘটনাস্থলেই মারা গেলেও তাকে আসামি করা হয়নি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন জানায়, দূর্ঘটনা কবলিত বাসার স্মৃতি গাড়ীর চালক মোহন খান, সুপারভাইজার ফয়সাল ওরফে মিজান ও হেলপার আকাশ ওরফে বুলেট নামে ৩জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলাটি অতিরিক্ত যাত্রীবহন ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ী চলাচলের অভিযোগে দ:বি: সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ৯৮ ও ১০৫ ধারায় রেকর্ড করা হয়েছে। মামলা রেকর্ড করার পর পরেই দূর্ঘটনা কবলিত গাড়ীটি পুলিশ জব্দ করলেও এখন পর্যন্ত আসামীদের কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি বলে তিনি জানিয়েছে।
চালকের ছিলনা ভারী লাইসেন্স: এদিকে ঝালকাঠি বাস শ্রমিক ইউনিয়নের কর্মকর্তারা জানান, ঘাতক গাড়ীর চালক মোহন স্থানীয় শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য নয়। তার হালকা যান চালানোর লাইসেন্স থাকলেও যাত্রীবাহী বাস চালানোর লাইসেন্স নেই। লাইসেন্স না থাকলেও বাসার স্মৃতি গাড়ীর মালিক তাকে কিভাবে ড্রাইভার নিয়োগ করলো সেটা তারা জানেন না। গাড়ির মালিককেও আসামি করা উচিত ছিল। অদক্ষ ড্রাইভার দিয়ে গাড়ি চালানোয় মালিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
পুকুর ভরাট করতে চিঠি দিবেন: বাস দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পর ঘুম ভেঙ্গেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্তাদের। দুর্ঘটনার পর পুকুরটি ভরাট করতে জমির মালিককে নির্দেশ দিবেন বলে জানিয়েছেন সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন। তিনি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলেন, আঞ্চলিক মহা-সড়কের আইনে ১০ মিটারের মধ্যে কোন স্থাপনা বা দখল করা যাবেনা। ঐ স্থানে পুকুর খননকারীকে ভরাট করতে চিঠি দেওয়া হবে। অতি সত্বর সড়কের পাশে খালি স্থানে গাছ রোপন করা হবে।