এখন বর্ষাকাল। চারিদিকে থৈ থৈ পানি থাকার কথা। কিন্তু আষাঢ় মাস চলে গেলেও একফোটা পানি নেই আকাশের। চলমান শ্রাবন মাস। শ্রাবনের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও আকাশের পানি নামছে না।
গত কয়েক সপ্তাহ থেকে চলছে প্রখর রোদ। মানুষ ঘর থেকে বাইরে কম বের হচ্ছে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে কেউ বের হচ্ছে না। রোদের সাথে পাল্লা দিয়ে টানা গরম পড়ছে। প্রচন্ড গরমে মানুষ দিশেহারা। তার সাথে যোগ হয়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং খেলা। দিনে রাতে কখন যে কয়বার বিদ্যুৎ যায় আসে তার হিসাব মিলছে না।
পানির অভাবে কেউ কেউ পাট কাটার পর তা জাঁক দিতে পারছেন না। অনেকের পাট রোদে পড়ে থাকতে থাকতে নষ্ট হয়ে গেছে। আকাশে মেঘের দেখা নেই। কোন কোন সময় সাদা কালো মেঘ আকাশে ছুটাছুটি করতে দেখা গেলেও মেলছে না পানি। এদিকে বৃষ্টির অভাবে জমি খাঁ খাঁ করছে। আমন চাষীরা পড়েছে চরম বিপাকে। অনেকটা মাথায় হাত পড়েছে তাদের। তারা বলছেন ভরা বর্ষায় পানি নেই। এখনই আমন রোপনের মোক্ষম সময়। পানির আশায় আমাদের বীজতলা নষ্ট হচ্ছে। আবার কোন কোন কৃষক আকাশের পানির আশায় না থেকে শ্যালো মেশিন, মর্টার দিয়ে পানি জমিতে দিয়ে চারা রোপন করছেন।
অপরপাশে প্রচন্ড গরমের কারণে শ্রমিকরাও কাজে যাচ্ছেন না। তারা বলছেন শরীর ভাল থাকলে কর্ম করতে পারবো আর যদি শরীর খারাপ হয় তাহলে কাজ করতে পারবো না। তাই অতিরিক্ত গরমে তারা কাজে যেতে অনীহা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. এস, এম, আবু বক্কর সাইফুল ইসলাম জানান, এবার জেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে।
সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের কৃষক মমিন আজাদ জানান, ৮ বিঘা জমিতে আমন রোপন করেছেন। আষাঢ় মাসে বৃষ্টি না হওয়ায় তিনি মর্টারের সাহায্যে সেচ দিয়ে চারা রোপন করেছেন। তবে এতে তার খরচ বেশী পড়েছে। তিনি বলেন আকাশের পানি হলে আবাদে খরচ কম হয়। অপরদিকে কামারপুকুর ইউনিয়নের কৃষক শাহাদৎ হোসেন জানান, তিনি এখন পর্যন্ত চারা রোপন করতে পারেননি। পানির অভাবে আমন রোপন নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, ভরা বর্ষাকালেও পানি নেই। আমন রোপন নিয়ে তিনিও পড়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়। তবে কিছু জমিতে মর্টারের সেচ দিয়ে চারা রোপন করেছেন। তবে পানি না হওয়ায় সেগুলো তেমন একটা পুষ্ট হচ্ছে না। সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধীমান ভষন জানান, এবার সৈয়দপুরে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ২শ ১০ হেক্টর জমিতে।
নীলফামারী সদর উপজেলার কৃষক আফছার আলি জানান, আমন রোপন নিয়ে ব্যস্ততায় আছেন। পানি না হওয়ায় পড়েছেন চিন্তায়। তিনি বলেন এ মাসে যদি আমন রোপন করা না যায়, তাহলে কোন লাভ হবে না। কারণ মাসের শেষে ধান রোপন করলে ফলন ভাল হবে না। ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের কৃষক লাজু হোসেন বলেন, আমন রোপন নিয়ে আমিও পড়েছি বিপদে। এ সময় যদি আকাশের পানি না হয় তাহলে আবাদ মার খেতে পারে। ডিমলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সেকেন্দার আলি জানান, এবার ডিমলা উপজেলায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ হাজার ৪শ ৩৮ হেক্টট জমিতে। ডোমার উপজেলার কৃষক আহসান হাবীব বলেন, তিনিও পানির অভাবে আমন রোপন করতে পারেননি। তবে আশায় আছেন আকাশের পানি কবে নামবে। ডোমার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, পানি না হওয়ায় আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছি চারা রোপনের। শ্যালো মেশিন, গভীর নলকুপ, বিএডিসি সেচ প্রকল্প, বরেন্দ্র সেচ প্রকল্প থেকে পানি সংগ্রহ করে আমন রোপন করার। তিনি বলেন এবার ডোমার উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪শ ৩৫ হেক্টর জমিতে।
কিশোরগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের মুশা গ্রামের কৃষক সফিয়ার রহমান জানান একই কথা। তিনিও পানির অভাবে আমন আবাদ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন। তিনি এক বিঘা জমিতে ধান রোপন করতে খরচ হয়ে থাকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। এখন পানি সংগ্রহ করে রোপন করতে খরচ হচ্ছে চার হাজার টাকা। কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম জানান, এবার তার উপজেলায় লক্ষমাত্রা নিধারণ করা হয়েছে ৮শ ৮৫ হেক্টর জমিতে। পানির অভাবে আমন নিয়ে যখন কৃষকরা দিশেহারা তখন কৃষকদের সেচ দিয়ে আমন রোপণের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে কৃষি বিভাগ থেকে। আর এ বিষয়ে সব সময় পাশে আছে মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা।