শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, আর সেই শিক্ষাকে পরিচর্যা ও পরিপক্ব করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিস্থাপিত করেন শিক্ষকেরা। সেই শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ভবিষ্যতের কর্ণধার হন শিক্ষার্থীরা। তাই শিক্ষাকে জাতীয়করণ করা প্রয়োজন। এতে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত হবে। শিক্ষকদেরও দীর্ঘদিনের দুর্দশার অবসান ঘটবে। শিক্ষকেরা যে পরিমাণ বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন, তা দিয়ে পরিবার চালানো বেশ কষ্টসাধ্য-মাধ্যমিক শিক্ষকদের এই আহাজারি দীর্ঘদিনের। এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা, ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান এবং একই কারিকুলামের অধীন একই সিলেবাস, একই অ্যাকাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য। এসকল কারণে মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে চাচ্ছেন না। এ ছাড়া বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন-স্কেল সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন-স্কেলের একধাপ নিচে। ফলে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ডাকে গত কয়েক দিন রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে ছুটে আসছেন রাজধানীতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিতে।শিক্ষকেরা আমাদের সমাজের আলোকবর্তিকা। মানসম্মত শিক্ষার ৮৫ শতাংশ নির্ভর করে শিক্ষকের ওপর। কিন্তু শিক্ষকদের মানসম্মত শিক্ষা প্রসারের জন্য অর্থনৈতিক মুক্তি প্রয়োজন। অর্থনৈতিক মুক্তি ছাড়া শিক্ষকদের কাছ থেকে মানসম্মত শিক্ষা আশা করা যায় না। শিক্ষাকে জাতীয়করণের দাবিটি যৌক্তিক। কিন্তু নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারকে চাপ দেওয়া নীতিগতভাবে ঠিক হয়নি শিক্ষকদের। তারপরেও সরকারের প্রতি আহ্বান করছি মাধ্যমিক শিক্ষাসহ সব শিক্ষা জাতীয়করণ ও শিক্ষকদের মানসম্মত বেতন-ভাতা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক। কেননা সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মাধ্যমিকে শিক্ষকদের সংখ্যা পৌনে ৩ লাখ। অভিযোগ আছে, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অনেকের পাঠদানের যোগ্যতা নেই। শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে। অনেক শিক্ষকের শিক্ষাগত ডিগ্রি থাকলেও পাঠদানের যোগ্যতা নেই। তাই দেশে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে শিক্ষা জাতীয়করণ জরুরি।