এই প্রথমবারের মতো বরিশাল বিভাগের এক পৌর মেয়র ও তার শ্যালকসহ চারজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। বিষয়টি বৃহস্পতিবার চাউর হলে পুরো বিভাগজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
মামলা দায়েরের সত্যতা স্বীকার করেছেন দুদকের বরিশাল সমন্বিত কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। বরিশালের দুদক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাজ কুমার সাহা বাদি হয়ে গত মঙ্গলবার মামলাটি দায়ের করেন। বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলার লালমোহন পৌরসভার মেয়র এমদাদুল ইসলাম তুহিন ও তার শ্যালক কামাল হোসেন রিয়াজসহ চারজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনে মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলার অপর দুই আসামি হলেন-বর্তমানে পিরোজপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ও লালমোহন পৌরসভার সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ধ্রুব লাল দত্ত বণিক ও লালমোহন পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. নিজাম উদ্দিন।
মামলায় তাদের বিরুদ্ধে যোগসাজস, অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছে। তারা সবাই মিলে লালমোহন পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর বাজার এলাকায় লালমোহন পৌর অডিটোরিয়াম (পার্ট-১, পার্ট-২ ও পার্ট-৩) এর নির্মাণ কাজ সঠিকভাবে শেষ না সরকারি ৪৩ লাখ ৮৮ হাজার ৯১২ টাকার আত্মসাৎ করেছেন বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে।
মামলার নথিতে বাদি উল্লেখ করেন, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে লালমোহন পৌর অডিটোরিয়াম (পার্ট-১, পার্ট-২ ও পার্ট-৩) এর নির্মাণ কাজের দরপত্র আহবান করা হয়। নির্মাণকাজের জন্য মোট তিনজন ঠিকাদার দরপত্র জমা দিলে তাদের মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা হন মেয়র তুহিনের শ্যালক কামাল হোসেন রিয়াজ। তাই রিয়াজকে ১ কোটি ৯৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকার সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কার্যাদেশ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। চুক্তিপত্র অনুযায়ী কাজ শুরু হওয়ার দিন ছিলো ২০২০ সালের ২৫ মে। একই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিলো। ঠিকাদার কামাল হোসেন রিয়াজ কাজের ৮০ ভাগ শেষ করে ওইবছরের ২১ জুলাই ৮৭ লাখ ১১ হাজার ১৪০ টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে।
পরবর্তীতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মের্সাস রিয়াজ স্টোর পৌর অডিটোরিয়ামের বাকি কাজ শেষ না করেই নির্বাহী প্রকৌশলী বিল দেওয়ার জন্য মেয়রকে সুপারিশ করেন। যেকারণে মেয়র চূড়ান্ত বিলের অনুমোদন করেন। পরবর্তীতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজের ১ কোটি ৭৪ লাখ ৮৩ হাজার ৯১৯ টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে।
সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ১৫ মার্চ গণপূর্ত বিভাগের চার সদস্য বিশিষ্ট একটি নিরপেক্ষ প্রকৌশলী টিম নিয়ে বাস্তবায়িত নির্মাণ কাজের পরিমাপ গ্রহণ করা হয়। নিরপেক্ষ প্রকৌশলী ১ কোটি ৩০ লাখ ৯৫ হাজার টাকার কাজ সম্পাদন পেয়েছেন। সরকারিভাবে বরাদ্দের বাকি ৪৩ লাখ ৮৮ হাজার ৯১২ টাকারও বেশি আসামিরা আত্মসাৎ করেছেন।