ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ঝুঁকিপূর্ণ দেখিয়ে কাটার অপেক্ষায় রয়েছে নগরীর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কলোনির বিভিন্ন প্রজাতের ১২৯টি গাছ। নগরীর বান্দরোডস্থ পাউবো কলোনির এসব গাছ কাটার জন্য ইতোমধ্যে দরপত্র প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন চলছে শুধু গাছগুলো কাটার প্রস্তুতি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের এমন সিদ্ধান্তে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদী সংগঠন ও সচেতন মহল। তবে পাউবোর কর্মকর্তারা বলছেন, এসব ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো কেটে পূর্ণরায় গাছের চারা রোপন করা হবে। তাই ক্ষতিগ্রস্ত গাছগুলো কাটার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে সকালে নগরীর বান্দরোডস্থ পানি উন্নয়ন বোর্ড কলোনিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় অর্ধশত বছর বয়সের ১২৯টি গাছ কাটার জন্য ইতোমধ্যে লাল ও নীল রং দিয়ে সনাক্ত করে নম্বর দেয়া হয়েছে। যারমধ্যে রয়েছে রেইনট্রি, মেহগনি, শিশুসহ বিভিন্ন প্রজাতের গাছ। কাটার তালিকায় শুধু এসব গাছ নয়; পানি উন্নয়ন বোর্ড কলোনির প্রবেশদ্বারে রয়েছে ফলজ গাছ কাঁঠাল ও জাম। সেগুলো কাটার জন্যও চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, নগরীর বান্দরোডস্থ এলাকায় বিশাল আয়তনজুড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয় এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য দুটি আবাসিক এলাকা রয়েছে। যারমধ্যে একটি বিআইপি কলোনি অপরটি ওয়াপদা কলোনি নামে পরিচিত। স্বাধীনতার আগে এসব স্থাপনা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সেখানে বিভিন্ন প্রজাতের বৃক্ষরোপণ করা হয়। এই দুই কলোনির ১২৯টি গাছ নিলামে দিয়ে কেটে ফেলার সিদ্ধান্তে খোদ কলোনির বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু পাউবোর কর্মচারী হওয়ায় তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এমন পরিবেশঘাতী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতে পারছেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআইপি কলোনির একাধিক বাসিন্দারা বলেন, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এমন কয়েকটি গাছ দেখিয়ে ১২৯টি গাছ বিক্রি করছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তাই পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে তারা গাছগুলো বিক্রির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি করেছেন। তারা আরও বলেন, নিলাম বিজ্ঞপ্তিতে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বিভিন্ন প্রজাতের ১২৯টি গাছ কাটা বা অপসারণে নিলাম দরপত্র আহবান করা হলেও বাস্তব চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। বাস্তবে দুই-তিনটি গাছ বন্যায় ভেঙে গেছে এবং হেলে পরেছে। তবে নিলামে বিক্রির জন্য রং দিয়ে নম্বর লিখে চিহ্নিত করা গাছগুলো সম্পূর্ণ অক্ষত এবং সতেজ।
নগরীর পরিবেশবাদী সংগঠন ও সচেতন মহলের নেতৃবৃন্দরা পাউবোর এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, নগরীতে ইতোমধ্যে সড়ক প্রশস্তকরণের নামে শতবর্ষী গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। ফলে অনেকটাই বৃক্ষ শুন্য হয়ে পরেছে বরিশাল নগরী। তারমধ্যে আবার নতুন করে পুরোনো এতোগুলো গাছ কাটার উদ্যোগ আত্মঘাতী। এতে শহরের পরিবেশের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পরবে।
পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়ক লিংকন বায়েন বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য গাছের ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। তাই চাইলেও গাছ কাটা যাবেনা। সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া গাছ কাটা হলে সেটা অবশ্যই আইন পরিপন্থী। উন্নয়নের জন্য হলেও পরিবেশের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। পাউবোর সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তিনি বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। পাউবো তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসলে আমরা সামাজিকভাবে এ ব্যাপারে আন্দোলন গড়ে তুলবো। পাশাপাশি কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে অবশ্যই আমরা আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
পাউবোর নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, দুটি কলোনির ১২৯টি গাছ নিলামের জন্য গত ২২ জুন দরপত্র আহবান করা হয়। জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে দরপত্র সম্পন্ন হয়। এতে ৪০টির ওপর দরপত্র বিক্রি করা হলেও নিলামে অংশগ্রহণ করেছে মাত্র চারটি প্রতিষ্ঠান। যার সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ২৪ লাখ টাকা। সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন মো. আরিফ নামের এক ব্যক্তি।
পাউবোর বরিশাল জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব হোসাইন বলেন, যেসব গাছ নিলামে বিক্রি করা হচ্ছে, সেগুলো ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত। বড় ঝড় হলে এগুলো ভেঙে কিংবা হেলে পরে আমাদের ভবনগুলোকে ঝুঁকিতে ফেলে দেয়। তাই নিলামে বিক্রি করা হচ্ছে। তাছাড়া এ বিষয়ে আমরা বন বিভাগের অনুমতি নিয়েছি। বন বিভাগ আমাদের শর্ত দিয়েছে, যে একটি গাছ কাটলে দুটি লাগাতে হবে। আমরা সেই শর্ত মেনেই গাছগুলো বিক্রির উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
সামাজিক বন বিভাগ বরিশালের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল বলেন, গাছ কাটার বিষয়ে আমরা কোন সিদ্ধান্ত দেইনি। গাছগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ডের। সেখানে আমাদের কোন হাত নেই। তারা আমাদের জানিয়েছে আমরা শুধু গাছগুলোর মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছি।