তাসনিয়া ফারিন হীরা এবং অবন্তি মেহের মুক্তা এরা দুজনই জমজ বোন। এবার এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অবন্তি মেহের মুক্তা জিপিএ গোল্ডেন৫ পেয়েছে এবং তাসনিয়া ফারিন হীরা জিপিএ৫ পেয়েছে। যশোরের ঝিকরগাছা পৌর সদরে ঐতিহ্যবাহী বদরুদ্দিন মুসলিম হাই স্কুল থেকে দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে তারা কৃতিত্বের সাথে এ ফলাফল অর্জন করেছে। তাদের বাবা মনজুরুল ফয়েজ কর্ম অক্ষম প্রতিবন্ধী একজন মানুষ। মা হাফিজা বেগম কাপড় সেলাই করে কোনরকম অর্ধাহারে অনাহারে তিনটি মেয়ে নিয়ে সংসার জীবন পরিচালনা করেন। বড় মেয়ে সুরাইয়া আক্তার তন্নী এবার এম এম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ইংরেজি বিষয়ে এমএ শেষ বর্ষের পরীক্ষায় অংশ নেবে। তার ফলাফলও ছিল এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ৫ এইচ এস সি তে জিপিএ৫।
হাফিজা বেগমের সাথে কথা হলে তিনি দৈনিক কল্যাণকে শুক্রবার (২৮ জুলাই) দুপুরে অশ্রু সজল নয়নে জানান - আমরা ঝিকরগাছা পৌর সদরের কৃষ্ণনগর মন্ত্রী পাড়ার নিজেদের তিন শতক জমির উপরে বসবাস করি। আমাদের সংসারে তিনটি মেয়ে, আমার সংসারকে আলোকিত করে রেখেছে। আমার স্বামী একসময় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। সেখানে বেতন না থাকায় তিনি চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে আসেন। তারপর থেকে সে কোন কাজ কাম না করতে পারায় এখন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী প্রায় অবস্থা। ঝিকরগাছা মাছ বাজারের বিভিন্ন আড়তে সে মানুষের কাজ করে দেয়। আর আমি ঘরে বসে দর্জির কাজ করে আমার মেয়েদেরকে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। কখনো অর্ধ হারে কখনো অনাহারে আমার মেয়েরা মানুষ হওয়ার যুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষায় আমার হিরা মুক্তা ভালো রেজাল্ট করেছে। আমি এখন দুশ্চিন্তায় আছি। কোথায় টাকা পাব এবং কি করে তাদের ভালো কলেজে ভর্তি করাবো? নেই কোন সম্পদ নেই অর্থ কড়ি। স্থানীয় কলেজের স্যারদের হাতে পায়ে ধরে যদি আমার মেয়েদেরকে লেখাপড়া করাতে পারি, তাহলে হয়তো আমি তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারবো। মেয়ে দুটোর ইচ্ছে ভালো নামিদামি কলেজে ভর্তি হয়ে ভালো রেজাল্ট করা ভালো মানুষ হওয়ার দেশের মানুষকে সেবা করার। আমি আমার মেয়েদের জন্য সরকার অথবা সমাজের কোন দানশীল ব্যক্তি যদি এগিয়ে আসে তাহলে হয়তো ভালো কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে পারবো। আল্লাহই একমাত্র ভরসা।
এবার এসএসসিতে জিপিএ গোল্ডেন৫ পাওয়া অবন্তি মেহের মুক্তা জানায় - আমার মা আমাকে ডাক্তার হিসেবে দেখতে চাই। কিন্তু আমার এ আশা বামন হয়ে চাঁদে হাত বাড়ানোর মতো। আদৌ কোন পড়াশোনা করতে পারব কিনা সেই ভয়ে আছি আমি।
জিপিএ ৫ পাওয়া অপর জমজ বোন তাসনিয়া ফারিন হীরা জানায় - অর্ধাহারে অনাহারে থেকে উকিল হওয়ার স্বপ্ন দেখছি।
জমজ ২ বোন আরো জানায় - বিএম হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুস সামাদ স্যার সহ সকল স্যারদের সহযোগিতা এবং আমার মায়ের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং দোয়ায়ে আমাদের এ ভালো রেজাল্ট করতে সাহায্য করেছে।
ঝিকরগাছা বদরুদ্দিন মুসলিম হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুস সামাদ জানান - তাদের দারিদ্রতা দেখে আমার প্রতিষ্ঠানের সকলেই তাদের সাহায্য করেছেন। আমি সরকার এবং দেশের দানশীল মানুষের কাছে অনুরোধ করবো, জমজ দুই বোন হিরা মুক্তার লেখাপড়ায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।