নওগাঁর পত্নীতলায় শুক্রবার বেলা ১১টায় মথুরাপুর সৈয়দ জামিল হাসান আনন্দময়ী বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের উদ্বোধন করা হয়েছে। এলাকায় বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ ও আনন্দঘন পরিবেশে শিক্ষা লাভের সুযোগ সৃষ্টির প্রয়াসে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইনিসিয়েটিভ ফর সোস্যাল চেইঞ্জ (আইএসসি) এবং হোপনুংগ ফর বাংলাদেশ এর আর্থিক সহায়তায় এই বিদ্যালয় ভবনটি নির্মাণ করা হয়। শুরুতেই জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর অতিথিবৃন্দ ফিতা কেটে নতুন ভবনের শ্রেণীকক্ষগুলো উদ্বোধন করেন।
পরে আইএসসি’র সভাপতি ও একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি অ্যাডভোকেট ডিএম আবদুল বারীর সভাপতিত্বে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন নজিপুর পৌর সভার মেয়র রেজাউল কবির চৌধুরী। এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আইএসসি’র কোষাধ্যক্ষ ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ডঃ সিদ্দিকুর রহমান, সদস্য সিঁথি সালমা খান, নির্বাহী পরিচালক অনিক আসাদ, চিফ অব অপারেশন আবুল হাসনাত, মথুরাপুর সৈয়দ জামিল হাসান আনন্দময়ী বিদ্যালয়ের সভাপতি নরেন চন্দ্র পাহান, প্রধান শিক্ষক পরিতোষ পাহান প্রমুখ। বক্তারা নতুন ভবন নির্মাণের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে শিক্ষক ও অভিভাবকদেও অগ্রগামী ভুমিকার কথা তুলে ধওে তাদেও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের আহবান জানান। আলোচনা সভা শেষে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেও অংশগ্রহণে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
জানা গেছে, পত্নীতলা উপজেলার মথুরাপুর সৈয়দ জামিল হাসান আনন্দময়ী বিদ্যালয়টি ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। একটি মাটির ছোট ঘরে বিদ্যালয়টি পরিচালিত হয়ে আসছিল। এই বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীর শতভাগই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর। বিদ্যালয়ের ৩কিলোমিটারের মধ্যে কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত একটি মিশনারীজের সহায়তায় বিদ্যালয়টি পরিচালিত হয়ে আসছিল। ২০১০ সালে মিশনারীজের সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে কমিউনিটি নিজ উদ্যোগে বিদ্যালয়টি চালু রাখে। বিদ্যালয়ের সাথে জড়িত ৪জন শিক্ষক বিনা বেতনে অদ্যাবধি শিক্ষকতা করে আসছে। কমিউনিটির উদ্যোগে বিদ্যালয়টি পরিচালিত হয়ে আসলেও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের সামর্থ না থাকায় বিদ্যালয়ের মানোন্নয়নে তাঁরা তেমন একটা ভুমিকা রাখতে পারছিল না। দিন দিন বিদ্যালয়ের অবকাঠামো নষ্ট হয়ে পড়ায় এই বিদ্যালয়ের প্রতি শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে এলাকায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষা লাভের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামো উন্নয়নে আইএসসি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর ছাত্রী সপ্তমী টপ্য, ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রী রনিতা খয়া ও ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী জয়া টপ্য বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে ক্লাস করার জন্য ঘর না থাকায় বিদ্যালয়ে আসতে মন চাইতো না। এখন বিদ্যালয় বিল্ডিং হওয়ায় খুব ভালো লাগছে। আমরা এখন আনন্দে পড়ালেখা করতে পারবো। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরিতোষ পাহান বলেন, বিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৬৫ শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রয়োজনীয় শ্রেণীকক্ষ না থাকায় আমরা সকল শিক্ষার্থীদের একসাথে ক্লাসে আনতে পারতাম না। নতুন শ্রেণীকক্ষের ফলে শিক্ষার গুনগতমান বাড়বে এবং বিদ্যালয়ের প্রতি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়বে। এখন আমরা মানসম্মত ভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে পারবো। তিনি আরো বলেন, গত ২০১০ সাল থেকে আমিসহ ৪জন শিক্ষক বিনা বেতনে পাঠদান করে চলেছি। আমরা আশায় বুধ বেঁধে আছি হয়ত একদিন আমাদের বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হবে এবং আমাদের স্বপ্ন পুরণ হবে। এই স্বপ্ন পুরণের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্ত্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আইএসসি’র প্রধান নির্বাহী অনিক আসাদ বলেন, আইএসসি’র মূল লক্ষ্যই হলো সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করা। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষা বিস্তারে আইএসসি’র এ ধরণের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।