২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি একই সাথে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন চারজন শিক্ষক। নিয়োগপ্রাপ্ত হলেন সহকারি শিক্ষক এসএম হাবিবুল হাসান, ফরিদা ইয়াসমীন, উম্মে কুলসুম এবং মুক্তা বানু। স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে তারা বিগত ১৭-০১-২০১০ তারিখে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। নিয়োগ পেয়ে তারা যোগদানও করেন। কিন্তু সহকারী শিক্ষক ফরিদা ইয়াসমীন, উম্মে কুলসুম এবং মুক্তা বানু সরকারি বেতন-ভাতা পেলেও অদ্যাবধি বেতন-ভাতাদি পাননি সহকারী শিক্ষক এসএম হাবিবুল হাসান। ফলে প্রায় সাড়ে তেরো বছর ধরে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন এই শিক্ষক।
সহকারী শিক্ষক এসএম হাবিবুল হাসান জানান, বিগত ১৯-০২-২০১৫ তারিখে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় (বিদ্যালয়-১) অধিশাখা কর্তৃক ৩৮.০০.১৫০০০.১৪০১-২০১৫-৬৭ নং প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিদ্যালয়টি ০১-০১-২০১৪ তারিখ থেকে সরকার নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং একই অধিশাখা কর্তৃক বিগত ০৭-০৩-২০১৮ তারিখে ৩৮.০০.০০০.০০৭.১৫.০০৪.১৭-৫৬ নং স্মারক মূলে সহকারী শিক্ষক এসএম হাবিবুল হাসানসহ আরও তিনজন শিক্ষককে জাতীয়করণে অন্তর্ভূক্ত করে।
সহকারী শিক্ষক এসএম হাবিবুল হাসান বলেন, ওই বিদ্যালয়ে শান্তিপূর্ণ পাঠদান করাকালিন স্বার্থান্বেষী মহলের পরামর্শক্রমে উপর্যুক্ত তিনজন শিক্ষিকা আমাকে পাঠদানে বাধাগ্রস্ত করলে আমি নিরুপায় হয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করি। যার নং ১৫৭০। তাতে কোন কাজ না হলে আমার বিরুদ্ধে আরও অসদাচারণ করায় বিগত ০৬-০৫-২০১৯ তারিখে সাতক্ষীরা সদর সহকারি জজ আদালতে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মামলা করি। যার নং ৬৬/২০১৯। আমার সকল কাগজপত্র দেখে দোতরফা সূত্রে ১৫-১০-২০১৯ তারিখে আদালতের রায় ও ০৭-১১-২০১৯ তারিখে ডিক্রি পাই। ডিক্রি বুনিয়াদে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সদর বরাবর বকেয়া ও চলতি বেতন-ভাতাদি পাওয়ার আবেদন করি। আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (সদর) ০৭-০৭-২০২০ তারিখে ৫৩৭নং স্মারক মূলে আমার বেতন-ভাতা প্রদান করার জন্য সাতক্ষীরা জেলা হিসাব রক্ষণ অফিসে প্রেরণ করেন। কিন্তু জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বিদ্বেষ প্রসূত হয়ে অজ্ঞাত কারণে আমার বেতন-ভাতা বন্ধ করে রাখেন। আমি এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বলেন যে, ওই মামলার বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আপিল মামলা হয়েছে। যার নং ৩০/২০২০। আপিল মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বেতন-ভাতাদী বন্ধ থাকবে। আমি আপিল মামলায় ১০-১০-২০২০ তারিখে দোতরফা সূত্রে সহকারি জজ আদালতের ডিক্রি জেলা জজ বলবৎ রাখেন এবং আমার শিক্ষকতা দায়িত্ব পালনের জন্য রায় প্রদান করেন। আমার দায়িত্ব পালন করাকালিন পুনরায় বেতন-ভাতাদির আবেদন করলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সদর ২৯-১০-২০২০ তারিখে সরকারি জিপি’র মতামত চান। মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি রায়ের আলোকে বকেয়া বেতনা-ভাতাদিসহ স্কুলের সমস্ত কার্যক্রম করতে পারবেন বলে মতামত দেন। তার মতামতের ভিত্তিতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সদর সকল কাগজপত্র পর্যবেক্ষণ করে এবং অবগত হয়ে আমাকে ৩১-১২-২০২০ তারিখে ৮৭০নং স্মারক এর আলোকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর প্রেরণ করেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিন তরিঘড়ি করে আদালতের আদেশ তোয়াক্কা না করে আমার ক্ষতিকরার মানসে ০৩-০১-২০২১ তারিখে মহাপরিচালক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর, মিরপুর-২, ঢাকা-১২১৬ স্মারক বরাবর আমাকে সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদানের বিষয়ে নির্দেশনা প্রার্থনা করেন। যা অমূলক হয়রানি ছাড়া অন্য কিছু নয়। উপর্যুক্ত বিষয়াদির উপর সম্পূর্ণ ক্ষমতা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের থাকা স্বত্ত্বেও তিনি তার দায়িত্ব থেকে এড়িয়ে গেছেন বলে অভিযোগ করেন সহকারী শিক্ষক এসএম হাবিবুল হাসান। তিনি বলেন, বর্তমানে আমি পরিবার পরিজন নিয়ে মানবতার জীবন যাপন করছি এবং বিষয়টি নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছি।
এ ব্যাপারে সহকারী শিক্ষক এসএম হাবিবুল হাসান হয়রানির সুবিচার করত: সরকারি যাবতীয় বকেয়া বেতন-ভাতাদিসহ পেশাগত দায়িত্ব শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে পারেন সেজন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহা. আবদুল গনি বলেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সুন্দরবন টেক্সটাইল মিল্স সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এসএম হাবিবুল হাসান প্রচলিত ম্যানেজিং কমিটি কর্তৃক ১৭-০১-২০১০ তারিখে নিয়োগ এবং যোগদানপূর্বক শান্তিপূর্ণভাবে কর্মরত থাকাকালীন শিক্ষক নিবন্ধন হন এবং তার পিন নং-৯৯২০৮০৭৯৩০১০১ ও ১৯-০২-২০১৫ তারিখে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিদ্যালয়-১ অধিশাখা কর্তৃক ৩৮.০০৭.১৫.০০০.১৪.০১.২০১৫-৬৭ নং প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিদ্যালয়টি ০১-০১-২০১৪ তারিখে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনায়ন করা হয় ও একই অধিশাখা কতৃক ০৭-০৩-২০১৮ তারিখে ৩৮.০০,০০০.০০৭.১৫.০০৪.১৭-৫৬ নং স্মারক মূলে শিক্ষকগণ জাতীয়করণের অন্তর্ভূক্ত হয়। এবং গত ০২-০৭-২০১৮ তারিখে পরিদর্শনকালে তার নাম রয়েছে। কর্মরত অবস্থায় অন্যান্য শিক্ষকের ষড়যন্ত্রের শিকারে বিদ্যালয়ের পাঠদানে বাধাগ্রস্ত হলে গত ২৯-০৭-২০১৮ তারিখে সাতক্ষীরা সদর থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন যার নং-১৫৭০। এরপর ০৬-০৫-২০১৯ তারিখে সাতক্ষীরা সদর সহকারী জজ আদালতে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার ডিক্রি প্রার্থনা করেন এবং ১৫-১০-২০১৯ তরিখে দোতরফা সূত্রে শুনানীঅস্তে ০৭-১১-২০১৯ তারিখে রায় ও ১৩-১১-২০১৯ তারিখে ডিগ্রীপ্রাপ্ত হলে বিবাদী পক্ষ ক্ষুব্ধ হয়ে বিজ্ঞ জেলা জজ আদালতে ০৯-০৩-২০২০ তারিখে আপীল মামলা দায়ের করেন যার নম্বর ৩০/২০২০। ওই আপীল মামলা বিজ্ঞ জেলা জজ দীর্ঘ শুনানীঅস্তে নি¤œ আদালতের রায় ও ডিগ্রী বলবত রাখেন।
তার প্রেক্ষিতে ২৯-১০-২০ তারিখে ৭৬০নং স্মারকে সরকারি কৌশুলীর (জিপি) মতামত চাওয়া হলে জিপি ২৭-১২-২০২০ তারিখে রায় ও ডিক্রির আলোকে সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনার সুপারিশ করেন। জিপি সন্তোষজনক মতামত দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে আর কোন জটিলতা নেই।
এ ব্যাপারে সাবেক সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রুহুল আমি বলেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে এসএম হাবিবুল হাসানের আত্মীকরণ করা হলেও তাঁকে ওই বিদ্যালয়ে যোগদান করতে দেওয়া হয়নি মর্মে তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেন। ইতোমধ্যে মামলার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি কৌশুলীর আইনগত মতামত চাওয়া হলে তিনি ইতিবাচক মতামত প্রদান করেছেন।
এমতাবস্থায় ওই শিক্ষকের সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে যোগদানের বিষয়ে মহোদয়ের সদয় নির্দেশনা প্রার্থনা করা হয়। এখন বিষয়টি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়ের অধীনে রয়েছে।