প্রশিক্ষনের মাধ্যমে দেশের বেকার যুব সমাজের সমস্যা দূর করতে চায় জাতীয় যুব পুরস্কার প্রাপ্ত শ্রেষ্ঠ জয়ীতা সুরাইয়া ফারহানা রেশমার প্রতিষ্ঠিত “রেশমা কৃষি উদ্যোগ”। দেশের কর্মক্ষম যুব সমাজকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে জনশক্তিতে রুপান্তর করা এই প্রতিষ্ঠানটির এখন অন্যতম লক্ষ্য। এরইমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি দেশের ৬১টি জেলার ৬৩০ জন কৃষি উদ্যোক্তাকে আনুষ্ঠানিক ও ২ সহ¯্রাধিক উদ্যোক্তাকে অনানুষ্ঠানিক ভাবে মানসম্মত জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপনন বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন। দিয়েছেন হাতে কলমে শিক্ষা। যাতে করে শিক্ষিত যুব সমাজ চাকুরীর পিছনে সময় নস্ট না করে নিজেরাই উদ্যোগ গ্রহন করে স্বাবলম্বী হতে পারেন। রেশমা কৃষি উদ্যোগের এরূপ মহতি উদ্যোগে পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, বগুড়া। প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও রেশমার স্বপ্নের খামারে সার্বিকভাবে কারিগরি পরামর্শ ও সহযোগিতা করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বগুড়ায় কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জনাব মোঃ আবদুর রহিম।
সরেজমিনে শেরপুর উপজেলার বোংগা গ্রামের রেশমা কৃষি উদ্যোগে গিয়ে জানা যায়, পিতা বা স্বামীর পরিচয়ে নয়, নিজের পরিচয়ে বড় হবার অদম্য আগ্রহে কেঁচো সার তৈরি করছেন সুরাইয়া ফারহানা রেশমা। তার এই উচ্ছা শক্তির উপর ভর করে তিনি হয়েছেন উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়ীতা। ২০২২সালে পেয়েছেন জাতীয় যুব পুরস্কার, প্রমিজিং প্রাণিসম্পদ এওয়ার্ড। ২০২৩ এ পেয়েছেন চ্যানেল আই সেরা সংগ্রামী নারী এওয়ার্ড। এর ধারাবাহিকতায় উদ্যোগ নিয়েছেন দেশের বেকার সমস্যার সমাধানে। প্রশিক্ষন গ্রহন করে স্বাবলম্বী নওগাঁ জোবায়ের হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পারভেজ, সুনামগঞ্জের আবদুল আওয়াল সহ অনেকেই এখন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন।
এ ব্যাপারে নওগা জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার ৫ নং রসুলপুর ইউনিয়নের রসুলপুর হাজিপাড়া গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে মোঃ জোবায়ের হোসেন বলেন, আমার দুটি আমের বাগান ও কৃষি জমি আছে। সেখানে বছরে প্রায় ৮০ হাজার টাকার জৈব সার প্রয়োগ করতে হয়। যা আমার জন্য কষ্টসাধ্য হতো। আমি ইউটিউবের মাধ্যমে রেশমা কৃষি উদ্যোগর প্রশিক্ষনের বিষয়টি জানতে পারি। পরে সেখান থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে আমি এখন নিজেই কেঁচো সার উৎপাদন করছি। আমার নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে এলাকার অন্যান্য কৃষদের চাহিদা পুরণ করার চেষ্টা করছি।
এ ব্যাপারে “রেশমা কৃষি উদ্যোগ” এর প্রতিষ্ঠাতা জয়ীতা সুরাইয়া ফারহানা রেশমা বলেন, স্বামীর সাথে বিচ্ছেদের পর কখনো ভাবিনি আমি কিছু করতে পারব। তবে মনের প্রচন্ড জোর এবং অদম্য প্রচেষ্টা আমাকে আজ সফলতা এনে দিয়েছে। আমার তেমন লেখাপড়া নেই। আমি যদি পারি তাহলে অন্যরা পারবেনা কেন? উপর্যুক্ত প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ পেলে যে কেউ নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এই উচ্ছা শক্তিতেই আমি প্রশিক্ষন দেয়ার উদ্যোগ গ্রহন করি এবং অনেকেই এই উদ্যোগে সাড়া প্রদান করে প্রশিক্ষণ গ্রহনে এগিয়ে আসে। ফেসবুক ও ইউটিউবে প্রচারের ফলে অনেক যুবক বিষয়টি জানতে পারে। আমার এখানে গত ২ বছরে ২১ টি আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষন সম্পন্ন করেছি। এদের মধ্যে অনেকেই আজ সাবলম্বী। আমার খুব ভাল লাগে যখন শুনি আমার এখানে প্রশিক্ষন দিয়ে কোন এক ভাই বা বোন বেকারত্ব থেকে বেড়িয়ে এসেছে। আমি চেষ্টা চালিয়ে যাব আমার দেয়া প্রশিক্ষনের মাধ্যমে যেন দেশের বেকারত্ব দূর হয়। এতে সকলের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করছি।