আষাঢ়ের প্রথম দিনটি ছিল বর্ষণমূখর। আশায় বুক বেঁধে ছিলেন চাষিরা প্রকৃতির বৈরিতা কাটলো বলে। আষাঢ় তার আগমনী বার্তা জানান দেওয়ার ঠিক দু-একদিন পরেই আবার রুদ্রমূতি ধারণ করে। মাসের মাঝামাঝি সময়ে টানা কয়েকদিন অবিরাম ঝরতে থাকে বৃষ্টি। নদী, নালা, খাল, বিল ফিরে তার হারানো যৌবন। পাট কাটার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের পাটচাষিরা। কেটেও ফেলেন কেউ কেউ। কিন্তু বাঁধ সেধেছে প্রকৃতি। অন্তত কুড়ি দিন টানা বৃষ্টিপাত না হওয়া এবং নদীর টানে শুকিয়ে যায় খাল, বিল ও নালার পানি। এ অবস্থায় জাগানো পাট নিয়ে পানি সংকট এবং পাটের মান নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন পাটচাষিরা। পাট অধিদপ্তর ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, চলতি বছরে উপজেলায় পাট করেছেন বেশ কয়েক হাজার চাষি, যার মধ্যে পাট অধিদপ্তর থেকে প্রণোদণা পেয়েছেন ৩ হাজার এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে পেয়েছেন ৪ হজার ২শ জন পাটচাষি। চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৮৬২ হেক্টর আর চাষ করা হয়েছে ৪ হাজার ৫৬৫ হেক্টর জমি, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২শ ৯৭ হেক্টর কম। আর গত বছরের তুলনায় চাষ হয়েছে ১শ ৪৫ হেক্টর কম।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বামনডাঙা, সোনারায়, সর্বানন্দ, রামজীবন ও তারাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন নালা ও সড়কের পাশে অপেক্ষাকৃত নীচু খালে পাট জাগিয়েছেন চাষিরা। বেশকিছু দিন ধরে বৃষ্টিপাত না হওয়া, তিস্তা ও ঘাঘট নদীর পানি কমে যাওয়া এবং খরতাপের প্রভাব পড়েছে খালবিল ও বিভিন্ন জলাশয়ে। শুকিয়ে গেছে পানি। শুকনো বা অল্প পানিতে পড়ায় পাট জাগগুলো নিয়ে বিপদে পড়েছেন পাটচাষিরা। কালো রং ধারণ করেছে পাটকাঠি থেকে ছাড়ানো আঁশগুলো। শ্যালো মেশিন কিংবা থালা বা গামলা দিয়ে জাগগুলোর ওপর পানি সেচ দিতে দেখা যায় কিষাণ-কিষাণীদের। আশা পাটের রং যেন সোনালি হয়। এদিকে, পানি না থাকায় তারাপুরের জমাদারের চরে তিস্তার ভাঙনে ফেলে যাওয়া নালায় বন্যার শঙ্কায় পাট জাগ যাতে ভেসে যেতে না পারে সেজন্য চাষিদের পাট জাগ দিতে দেখা যায় পায়ের গোড়ালি ডোবা পানিতে। আবার, জমির আইল বেঁধে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে সেচ দিয়েও পাট জাগাচ্ছেন কেউ কেউ। পাট কেটে রেখে বৃষ্টির আশায় আকাশ পানে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অনেকেরই পাট আবার শুকিয়ে লালচে রং বা পাটাশি হয়ে পড়ছে। উপায়ন্তর না পেয়ে এক দম্পতিকে দেখা গেল, বন্যা হলে জাগ ভেসে যাওয়ার ভয়কে দূরে ঠেলে দিয়ে ৯ দিন আগে কেটে রাখা পাটাশি হয়ে পড়া পাটই তিস্তার ফেলে রেখে যাওয়া নালায় জাগ দিতে। ওই কৃষক দম্পতি কালবেলাকে বলছেন, পাট কেটে রেখে বৃষ্টির আশায় আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম ৯ দিন। কিন্তু তা না হওয়ায় বাধ্য হয়ে নালাতে জাগ দিচ্ছি। বন্যা হলে ভেসে যায়। তবুও দিলাম আল্লাহ ভরসা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলছেন, পাটের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। তবে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় পাটের মান একটু নি¤œ মানের হতে পারে। সেজন্য রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট গাছ থেকে ছাল ছড়িয়ে নিয়ে গর্ত করে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখলে এ অবস্থা থেকে মুক্তি মিলবে। তাতে আঁশের রং সোনালি হবে এবং চাষি ভাইয়েরা দামও পাবেন বেশ ভালো। একই পরামর্শ দিলেন পাট অধিদপ্তর, সুন্দরগঞ্জের উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম বীরও।