নীলফামারীর সৈয়দপুরে ইকু পেপার মিলের ক্যামিক্যাল মিশ্রিত বিষাক্ত পানি ফেলা হচ্ছে পাশের খড়খড়িয়া নদীতে। ওই বিষাক্ত পানির কারণে মারা যাচ্ছে নদীর মাছ। তাছাড়া নদীর পানিতে নামলে মানুষের শরীরে দেখা দিচ্ছে চুলকানি রোগ। অনেক সময় ওই পানির কারণে শরীরে দানাদার লালচে ফুটকা দেখা দেয়। এমন কথা জানালেন ওই এলাকার একাধিক মানুষ। তারা বলছেন ইকু পেপার মিল চালুর পর থেকে মিলের বর্জ্যসহ ক্যামিক্যাল মিশ্রিত বিষাক্ত পানি ফেলা হচ্ছে নদীতে। পেপার মিলের মালিক সিদ্দিকুল আলম সুকৌশলে তার কোম্পানির ওই বিষাক্ত পানি ফেলছে নদীতে। এ ব্যাপারে এলাকার কৃষকরা বার বার তাকে মানা করলেও তিনি কোন কর্ণপাত করেননি। উল্টো নিজের টাকা খরচ করে মিল থেকে গর্ত করে তার ওপর সেতু নির্মাণ করেন। ওই সেতুর নিচ দিয়ে প্রতিনিয়ত বিষাক্ত পানি ফেলা হচ্ছে নদীতে। এ সময় নদীর পানি সাদা ও কাল রঙ ধারণ করে। কুন্দল এলাকার কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, আমি এক বিঘা জমিতে আমন রোপন করেছি। প্রতি বছর পানি সংকট দেখা দিলে নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে আমন রোপন করতাম। কিন্তু ইকু পেপার মিল চালুর পর থেকে নদীর পানি বিষে পরিনণ হয়েছে। নদীর পানিতে নামলে গা চুলকায়, শরীরে লালচে ফুটকা ওঠে। কোন কোন সময় ওই ফুটকা ব্যথাও করে। আর নদীর পানি সেচ কাজে ব্যবহার করলে ফসল নষ্ঠ হয়ে যায়। এ বিষয়গুলো মিল মালিককে অবহিত করা হলেও তিনি আমাদের কোন কথা শুনছেন না। ওই বিষাক্ত পানির কারণে মারা যাচ্ছে নদীর মাছ ও নষ্ঠ হচ্ছে ক্ষেতের ফসল।
এদিকে এলাকার বাসিন্দা সবুর আলম জানান, মিলের বিষাক্ত কালো ধোঁয়া এলাকার পরিবেশ নষ্ঠ করছে। তাছাড়া ধোঁয়ার কারণে শাক সবজী নষ্ঠ হচ্ছে, মারা যাচ্ছে। আম, কাঠাল, লিচু, সুপারী, নারকেল, কমলা গাছ মারা যাচ্ছে। ধোয়ার কারণে কোন গাছেই ফল ধরছে না। আবার কোন কোন গাছে ফল ধরলেও সেগুলো কিছুদিন পর ঝরে পড়ে। তাই ওই মিলের ধোয়া ও বিষাক্ত পানি থেকে আমরা মুক্তি চাই। ওই নদীর পানিতে নামলে অনেকের শরীরে দেখা দিয়েছে চর্মরোগ।
এলাকার অনেকের অভিযোগ ইকু পেপার মিলটির মালিক সিদ্দিকুল আলম। তিনি মিলটি করেছেন রাবেয়া নামক স্থানে। মিলটিতে যে কালো ধোঁয়া নির্গত হয় তা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ওই মিলের ধোঁয়া যখন বের হয় তখন রাবেয়াসহ আশপাশের বাসাবাড়িতে থাকা মশকিল হয়ে পড়ে। এমনকি ওই সময় পুরো এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। এর পাশাপাশি কোম্পানির মালিক সরকারী খড়খড়িয়া নদীর পাড় কেটে সেখানে সেতু নির্মাণ করে। ওই সেতুর নিচ দিয়ে তার মিলের বিষাক্ত পানি ফেলা হচ্ছে নদীতে। ওই পানি কখনো সাদা ও কখনো কালো রং ধারণ করে থাকে। নদীতে কেউ নামলে তার হাত পা চুলকাতে থাকে। শরীরে বড় বড় ঘা হচ্ছে ওই পানি থেকে। পানির কারণে নানা অসুখে ভুগছে গবাদী পশু ও পাখিও।
দীর্ঘদিন থেকে এ অবস্থা বিরাজ করলেও পরিবেশ অধিদপ্তর বা দায়িত্বে থাকা বড় কর্তাদের যেন কোন মাথা ব্যথা নেই। মিল কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ও বিষাক্ত পানি পার্শ্ববর্তী নদীতে নিষ্কাশন করছে। ওই বিষাক্ত পানি গড়িয়ে যেয়ে পড়ছে পাশের ফসলে। খড়খড়িয়া নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। ওই পানি ছড়াচ্ছে ভীষন দুর্গন্ধ। পরিবেশ নিয়ে কাজ করা এক নেতা বলেন, মিলের বিষাক্ত পানি কোনক্রমে নদীতে ফেলা যাবে না। আর যদি ওই পানি বিষাক্ত হয়। এতে মানুষের ক্ষতি হয়। ফসল নষ্ঠ হয়। পশুপাখি ওই পানি পান করে যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। মিল মালিকের এমন জঘণ্য কাজ করা ঠিক হয়নি।
এ ব্যপারে মিল মালিক সিদ্দিকুল আলমের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিপ না করায় মতামত জানা যায়নি।
পরিবেশ দূষন বিষয়ে নীলফামারী জেলা পরিবেশ দপ্তরের সহকারী পরিচালক কমল কুমার বর্মন বলেন, মিলের পানি নিজের জায়গায় ফেলতে হবে। সরকারী কোন নদীর পানিতে তো নয়েই। যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে আমরা ওই মিল মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এ ব্যাপারে নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, কোম্পানীর বিষাক্ত ক্যামিক্যাল মিশ্রিত পানি নদীতে ফেলা অপরাধ এবং কালো ধোঁয়ায় যদি পরিবেশ ক্ষতি হয় তাও অপরাধ। যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।