আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজতে কমিশনের রূপরেখা প্রস্তুত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি পেলে খুব শিগগিরই সেটি সংসদে উঠবে। আইনমন্ত্রী বলেন, কমিশনের কাজ প্রতিহিংসামূলক হবে না, ভবিষ্যতে কেউ যেন প্রশ্ন তুলতে না পারে। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুলের লেখা ‘পনেরো আগস্টের নেপথ্য কুশীলব’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। আনিসুল হক আরও বলেন, ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে বদলে দেওয়ার জন্য যে কলঙ্কিত চেষ্টা নেওয়া হয়েছিল, যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল, তার সঙ্গে কারা কারা জড়িত ছিল, সেটা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানানোই হবে কমিশনের উদ্দেশ্য। কানাডায় পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনি নুর হোসেনকে ফেরত না দিলে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তিনি বলেন, বিদেশে পলাতক বঙ্গবন্ধুর দুজন খুনির অবস্থান আমরা জানি। তাদের একজন এ এম রাশেদ চৌধুরী, সে আছে যুক্তরাষ্ট্রে। অন্যজন এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, সে আছে কানাডায়। নূরকে আনার চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কানাডা সরকার তাকে ফেরত দিতে অপারগতা জানাচ্ছে। আইনমন্ত্রী বলেন, কানাডা সরকার বলছে, তাদের আইন আছে, যদি কোনো ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ শাস্তি (মৃত্যুদণ্ড) দেওয়া হয় বা এমন কোনো মামলা আছে, যেটার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড তখন তারা সেই ব্যক্তিকে ফেরত দিতে চান না। তারপরও আমরা অনবরত এটা নিয়ে তাগিদ দিচ্ছি, চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যদি তারা তাকে ফেরত না দেন, তাহলে তাদের (কানাডা) সঙ্গে আমাদের যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এটাও আমরা তাদের জানিয়ে দেবো। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতে পারেনি জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, বিদেশে পালিয়ে থাকা খুনিদের যখন আমরা দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কথাবার্তা বলেছি, কেউ কিন্তু এ প্রশ্নটা অন্তত তুলতে পারেননি যে, বিচার কার্যক্রম সঠিকভাবে হয়নি। কিংবা বিচারকে প্রভাবিত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারকার্যের মাধ্যমে আসলে বাংলার মাটিতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার নতুন অধ্যায় রচিত হয়েছে। ফলে ১০০ বছর পরেও কেউ এ মামলার বিচার কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবেন না। সাধারণ আদালতে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হোক- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমনটিই চাওয়া ছিল জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ইনডেমনিটি বাতিল করা হলো। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম দিন থেকে চেয়েছিলেন যেন এ মামলার বিচারকাজ সাধারণ আদালতে হয়। জনসম্মুখে যেন এ মামলার রায় হয়। বাংলার জনগণ যেন জাতির পিতার খুনিদের সাজা কার্যকর হওয়ার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হতে পারে। তিনি বলেন, বিচারিক আদালতে এ মামলার রায় হলো। এরপর সেটা হাইকোর্টে এলো। তখনো কিন্তু শেখ হাসিনার সরকারই দায়িত্বে। হাইকোর্টের সাতজন বিচারপতি তখন এ মামলা শুনতে বিব্রতবোধ করেছিলেন। তারা কেন বিব্রতবোধ করেছিলেন, তা এখনো আমার বুঝে আসে না। আমি একজন আইনজীবী। এখন আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। আইনের পরিভাষায় বিব্রত হওয়ার বিষয়টি রয়েছে। তাই এটা নিয়ে আমি মন্তব্য করতে পারি না। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী আরও বলেন, তবে একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে অর্থাৎ দেশের জনগণ এটা মনে করতেই পারেন যে, ওই বিচারপতিরা নিশ্চয়ই এ হত্যাকাণ্ডের (বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা) পক্ষের শক্তি। এটাই বাস্তব, এটাই সত্য। এখন যে নেপথ্যের কুশীলব নিয়ে আমরা আলাপণ্ডআলোচনা করছি, সেখানে তো এদেরও আপনি নেপথ্যের কুশীলবের তালিকা থেকে বাদ দিতে পারবেন না। এটাও আমাদের চিন্তা করতে হবে। অনুষ্ঠানে সম্মানীত অতিথি হিসেবে আরও ছিলেন জাতীয় সংসদের উপনেতা ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম প্রমুখ। বিশেষ আলোচক ছিলেন ইতিহাসবিদ ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন এবং গবেষক, লেখক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। এ ছাড়া শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ওমর ফারুক এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ।