ঝালকাঠিতে সালিশ বৈঠককে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের দুই গ্রুপের দুইদফা সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছে। দুইপক্ষই তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুর করে। পুলিশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় পুলিশ ৪ জনকে আটক করেছে। বৃহস্পতিবার রাত ১১ টায় ঝালকাঠি শহরের হোগলাপট্টি এলাকার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনিরের বাস ভবনে প্রথম দফায় সংঘর্ষ হয়। পরে দ্বিতীয় দফায় রাত পৌনে বারটার দিকে শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহতদের ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহত ৩ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলামের (৩৫) মাথায় আঘাত লেগে অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
হামলায় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রুবেল (৩৫), সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পদক ফারদিন আহমেদ সান (২৫), জেলা ছাত্রলীগ সদস্য সাকিব, আবদুল্লাহ আল অভি (২২), ভৈরবপাশা ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি রাজিব হোসেন (৩২), সুলতান হাওলাদের স্ত্রী সালমা বেগম (৪৯), মেয়ে হাফসা সুলতানা (৩০)সহ ১৫জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় আটক ব্যক্তিরা হলেন, পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান (৩৫), সাকিব (২৫) মুন্না (৩৫) ও কালু (৩৫)।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, ঝালকাঠি শহরের লঞ্চ ঘাট এলাকায় স্থানীয় দুই ব্যবসায়ী সোহরাব হাওলাদার ও সুলতান হাওলাদারের মধ্যে গত তিনদিন আগের একটি পারিবারিক বিরোধ হয়। বৃহস্পতিবার রাতে সেই বিরোধকে কেন্দ্র করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনিরের বাসভবনে এক সালিশ বৈঠক বসে। সালিশ বৈঠকে ব্যবসায়ী সুলতান হাওলাদারের ছেলে নুরুন্নবী লিসান (২৯) ছাত্রলীগের সদস্য হওয়ায় তাঁর পক্ষে অবস্থান নেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম পারভেজ। অপর পক্ষ সোহরাব হাওলাদারের ছেলে জিহাদ হাওলাদারের পক্ষে অবস্থান নেন শহর যুবলীগের সাবেক সভাপতি আবদুল হক খলিফা।
সালিশ বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুই পক্ষকে মিলিয়ে দেন খান সাইফুল্লাহ পনির। পরে এই রায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে আ. হক খলিফার দুই ছেলে আমিন খলিফা ও রাজিব খলিফার হাতে থাকা হাতুড়ি দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ এর বৈঠকখানার টেবিলের গ্লাস ভেঙে ফেলে। এরপর আমিন খলিফা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলামের ভাই জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলামের গালেও মুখে হাতুড়িপেটা করে। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। চেয়ার টেবিল ছোড়াছুড়ি করে। পরে সেখান থেকে উভয় পক্ষকে নিভৃত করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ বের করে দেন।
এ ঘটনার সূত্র ধরে লঞ্চঘাটের দীর্ঘ দিনের অবৈধ বালুর ব্যবসা নিয়ে আ. হক তার জামাতা মন্টুর গ্রুপের সাথে দ্বন্ধ চলে আসছিল। এই ঘটনার সাথে পূর্ব বিরোধ চাঙ্গা হয়। দুই গ্রুপ দুই ভাগ হয়ে এলাকায় মহড়া দিতে থাকে। উত্তেজনার রেশ ধরে রাত পৌনে ১২টার দিকে শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। পরে এ সংঘর্ষের জের ধরে মাধ্যরাতে শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় উভয় গ্রুপের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে ব্যপক ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় উভয় পক্ষের চারজনকে পুলিশ আটক করে। গুরুতর আহত ৪ জনকে বরিশাল শেরেই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হামলা-ভাঙচুর ও সংঘর্ষের পর থেকে এলাকায় এ নিয়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে শহর যুবলীগের সাবেক সভাপতি আবদুল হক খলিফা বলেন, প্রতিপক্ষরা আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।
এ বিষয়ে সুলতানের ছেলে নুরুন্নবী লিসান বলেন, সালিশ বৈঠকে হামলা শেষে দ্বিতীয় দফায় হক খলিফা ও তার দুই ছেলে আমিন ও রাজিব খলিফার নেতৃতে দুর্বৃত্তরা আমাদের বাড়িঘর ও ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম বলেন, একটি সালিশ বৈঠকে বসে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সামনে আমার ভাই রফিকুল ইসলামকে হাতুড়ি পেটা করে গুরুতর আহত করে করে হক খলিফার দুই ছেলে। আমরা এই ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এই ঘটনার বক্তব্য নিতে বারবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহর কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঝালকাঠি থানার ওসি মো. নাসির উদ্দিন সরকার জানান, খবর শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্তিতি শান্ত করতে রাবার বুলেট মারতে হয়েছে। এ ঘটনায় কোন পক্ষই মামলা দায়ের করেনি। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৪জনকে থানায় আনা হয়েছে।