পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধভাবে মাছ শিকারের অপতৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। জরিমানা ও মামলা দিয়ে আদালতে সোপর্দ করলেও ঠেকানো যাচ্ছে না। ৬৫ দিনের ব্যবধানে বনরক্ষীরা পৃথক পৃথক ৮ টি অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান জাল কীটনাশকসহ ২৭ টি ট্রলার ও শতাধিক জেলেকে আটক করেছে। অবৈধভাবে মাছ শিকার প্রতিরোধে বন বিভাগ টহল জোরদার করেছে। এ নিষেধাজ্ঞা গত ১জুন থেকে শুরু হয়েছে এবং আগামী ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলে বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) অবৈধভাবে মাছ ধরার সময় পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখ মাহবুব হাসান এর নেতৃত্বে বনরক্ষীরা অভিযান চালিয়ে আলোর কোল এলাকা থেকে চারটি, বেদাখালি খাল থেকে দুইটি ও মানিকখালি খাল থেকে একটি ট্রলার ও মাছ ধরা জালসহ ১৪ জেলাকে আটক করে। আটক জেলেদের ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
গত ৩১ জুলাই রাতে জেলে পল্লী দুবলা টহল ফাড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে বনরক্ষীরা অভিযান চালিয়ে দুবলার মরনেরচর খাল থেকে অবৈধভাবে মাছ ধরার সময় একটি টলারসহ ৮ জেলেকে আটক করে। আটক জেলেদের বাড়ি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার পদ্মাসুলিজ গ্রামে। গত ২৩ জুলাই দুবলার এলাকার মরাপশুর খাল থেকে ১টি ট্রলারসহ ৪ জেলেকে আটক করে। ২২ জুলাই শ্যালার চর এলাকার নীলবাড়িয়া খাল থেকে ৪টি ও মানিকখালী খাল হতে ১টি ট্রলারসহ ২৫ জেলাকে আটক করে। এ ৬টি ট্রলার থেকে ২৩ টি ছান্দি জাল, ৬টি চিংড়ি বেহেন্দী জাল ও ২টি বেহেন্দী জাল জব্দ করা হয়। এদের সবার বাড়ি সুন্দরবন সংলগ্ন পাথরঘাটা উপজেলায়। আটককৃতদের বন আইনে মামলা দায়ের করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
গত ২৭ শে জুন শরণখোলা রেঞ্জের মগেরহোড়া খাল থেকে চরখালী টহল ফাড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিলীপ মজুমদারের নেতৃত্বে বনরক্ষীরা অভিযান চালিয়ে একটি ট্রলার সহ এক জেলেকে আটক করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিন বোতল রিপকট কীটনাশক ওষুধ ও কিছু চিংড়ি মাছ জব্দ করে। ২৬ জুন স্মার্ট টিমের সদস্যরা দুবলার চরের মাঝের কিল্লা খালে অভিযান চালিয়ে একটি ফিশিং ট্রলারসহ ১৪ জেলেকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে তিনটি মাছধরা জাল ও দুই বোতল কীটনাশক জব্দ করা হয়। আটক ৮ জেলেদের বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা দায়ের করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
অপরদিকে গত ৮ জুন বন বিভাগের স্মার্ট টিম চন্দেশ্বর টহল ফাড়ির কাঁতলেস্বর খাল থেকে চারটি ট্রলার ও ১৮ ছেলেকে আটক করেছে। তাদের বাড়ি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামে। তাদের বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ১ জুন কটকা অভয়ারন্য এলাকার খালে মাছ ধরার সময় বনরক্ষীর অভিযান চালিয়ে ৪ টি ট্রলার সহ ২৪ জেলাকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে ১২টি বেন্দি জাল কিছু মাছ জব্দ করা হয়। আটককৃতদের বাড়ি বরগুনা জেলার পাথর করা উপজেলার রহিতা গ্রাম। একটি সূত্র জানায়, পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ পাথরঘাটা উপজেলা সংলগ্ন হওয়ার কারণে রাতের আঁধারে অবৈধভাবে মাছ শিকারীরা বনে ডুকে মাছ শিকারে লিপ্ত হয়। এরা মামলা বা জরিমানার কখনও তোয়াক্কা করে না।
শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শেখ মাহবুব হাসান এ প্রতিনিধিকে বলেন, বন বিভাগের বিশাল এলাকা থাকা সত্ত্বেও বনবিভাগের কঠোর নজরদারির কারণে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধভাবে মাছ শিকারের সময় তাদের আটক করা হয়। আটককৃতদের বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আবার কোন কোন জেলেকে জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সুন্দরবনের সম্পদ রক্ষায় শরণখোলা রেঞ্জে বন বিভাগের ২টি স্মার্ট টিম নজরদারী করছে। সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদ সুরক্ষায় বন বিভাগের টহল আরো জোরদার করা হয়েছে।