একের পর এক নৌ দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানি হলেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না। সর্বশেষ মুন্সীগঞ্জে পিকনিকের ট্রলার ডুবে আটজনের প্রাণহানি হয়েছে এবং শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কয়েকজন নিখোঁজ ছিলেন। জানা যায়, প্রায় অর্ধশত যাত্রী নিয়ে পিকনিক থেকে ফিরছিল ট্রলারটি। এ সময় বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় ডুবে যায় সেটি। মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের ডহরী-তালতলা খালের খিদিরপাড়া ইউনিয়নের রসকাঠি গুদারাঘাট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। জানা যায়, বাল্কহেডটি পিকনিকের ট্রলারের উপরে উঠে গেলে ট্রলারটি ডুবে যায়। ট্রলারে ৪৬ জন যাত্রী ছিলেন। আহত কয়েকজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দেশের নদীপথে মূর্তিমান আতঙ্কের নাম ‘বাল্কহেড’। কোনো রকম নিয়ম না মেনেই চলছে এসব নৌযান। অভিযোগ আছে, সাধারণত নদী থেকে রাতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের পর তা পরিবহনে বাল্কহেডগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এসব বাল্কহেডের বেপরোয়া চলাচলের রাশ টানতে কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নিতে হবে। অবৈধ বাল্কহেড শনাক্ত করার পাশাপাশি ফিটনেসবিহীন নৌযান পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। রাতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ঠেকানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। যাত্রীবাহী নৌযান চলাচলের রুটে রাতে বাল্কহেড বা অন্য কোনো ঝুঁকিপূর্ণ নৌযান চলাচল করছে কিনা, তা সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখতে হবে। তা না হলে নৌপথে বারবার দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাবে। বস্তুত কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী ও মেঘনাসহ সারা দেশের নদীগুলোতে ছোট বড় বহু নৌযান চলাচল করছে। দেশের নৌপথ দিন দিন মানুষের চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন রুটে নৌযান চলাচলের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করছে কয়েকটি চক্র। অনেক ব্যবসায়ী আধুনিক মানসম্পন্ন নতুন নৌযান পরিচালনায় আগ্রহী হলেও নানা রকম বাধার মুখে পড়েন তারা। ফলে মান্ধাতা আমলের নৌযানে মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই নৌপথে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন যাত্রীরা। প্রশ্ন হলো এসব যাদের দেখার কথা তারা কী করেন? দেশে নৌযোগাযোগ খাতে মৌলিক নিরাপত্তার বিষয়গুলো কতটা উপেক্ষিত তাও বহুল আলোচিত। যাত্রী সুরক্ষার প্রশ্নে কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা মোটেই স্পষ্ট নয়। দেশে ফিটনেসবিহীন নৌযান চলাচলের বিষয়টিও বহুল আলোচিত। ফিটনেসবিহীন ও অনিবন্ধিত নৌযান খুঁজে বের করতে হবে। দেশের নৌযোগাযোগ খাতে সার্বিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় পদক্ষেপ নিতে হবে। যাত্রীদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাধাগুলো চিহ্নিত করে সমস্যার সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। দুর্নীতি রোধে কর্তৃপক্ষ কঠোর না হলে দেশের নৌযোগাযোগ খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। দুর্ঘটনা এড়াতে যাত্রীদেরও সতর্ক থাকতে হবে।