পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলা বন্দরের ব্যস্ততা অনেক বেড়েছে। পণ্য পরিবহনের পরিমাণ বেড়েছে। দেশের পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি এই বন্দর দিয়ে নেপাল, ভুটান ও উত্তর-পূর্ব ভারতে পণ্য পরিবহনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ফলে দিন দিনই এই বন্দরের গুরুত্ব বাড়ছে এবং বাড়তেই থাকবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, যে পশুর নদ দিয়ে বন্দরে জাহাজ আসে সেই নদের নাব্যতা সংকট। খননকাজ চলছে, কিন্তু নানা জটিলতায় সেই কাজ যথাযথ গতি পাঁচ্ছে না। এমনি একটি জটিলতা হচ্ছে খননের মাটি ও বালু ফেলার জায়গার অভাব। এজন্য দুই বছর আগে খুলনার দাকোপ উপজেলার বানিশান্তায় প্রায় ৩০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় কৃষকরা ওই জমির দখল ছাড়তে রাজি নন। বন্দর কর্তৃপক্ষ একাধিকবার ওই জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেও সফল হয়নি। এ অবস্থায় বন্দর চ্যানেল সচল রাখতে একাধিক বিকল্প নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত এগিয়ে চলেছে। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। দেশের আমদানি ও রপ্তানি দুটিই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি আঞ্চলিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ক্রমেই উন্নত হওয়ায় আঞ্চলিকভাবে এই বন্দর ব্যবহারের সুযোগ ও সম্ভাবনা দ্রুত বাড়ছে। তাই মোংলা বন্দরের উন্নয়নে আমাদের আরো তৎপর হতে হবে। জানা যায়, বড় পরিসরের জাহাজ বন্দরে আসার জন্য পশুর নদের গভীরতা স্থানভেদে ৭ থেকে ৯ মিটার পর্যন্ত বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে মোংলা এলাকায় ৭০০ একর জায়গায় মাটি ও বালু ফেলা হয়েছে। আরো ৩০০ একর জায়গার প্রয়োজন থাকায় বন্দর কর্তৃপক্ষ বানিশান্তা এলাকায় গিয়েছিল, কিন্তু এক ডজনেরও বেশি এনজিওর সমর্থনে সেখানে বিশাল আন্দোলন তৈরি হয়েছে। তাই বন্দর কর্তৃপক্ষ ভিন্ন উপায়ের কথা ভাবছে। খবরে জানা যায়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বৈঠক থেকে বন্দর চ্যানেল খননের মাটি ও বালু রাখার সমস্যাটি দ্রুত সমাধান করার জন্য তাগাদা দেওয়া হয়েছে। কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর-উত্তম বলেন, বন্দরের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধাও দ্রুত বাড়ানো প্রয়োজন, বিশেষ করে নাব্যতা সংকট নিরসনে পশুর নদের ইনার বার ড্রেজিং প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা জরুরি। জানা যায়, বালু জমিয়ে না রেখে ঠিকাদারের মাধ্যমে সেগুলো নিয়মিত বিক্রির উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়টিও কমিটিতে আলোচিত হয়েছে। রাজধানী থেকে এর দূরত্বও অনেক কম। এর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি রেল যোগাযোগও স্থাপিত হয়েছে। নৌ যোগাযোগও ভালো। ফলে এই বন্দরের সম্ভাবনা অপরিসীম। আমরা চাই, বন্দরের উন্নয়ন দ্রুততর হোক। খননের মাধ্যমে পশুর নদকে বড় জাহাজ চলাচলের উপযোগী করা হোক।