ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার জিন্নাত আরা মেহেরীনের বিরুদ্ধে রোগীদের সাথে দুর্বব্যবহার, অসদাচরণ, স্বেচ্ছাচারিতা, ভুলচিকিৎসা ও ডায়াগনস্টিক কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। রাজাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার কর্মস্থল হলেও তিনি প্রভাব খাটিয়ে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে সংযুক্তি রয়েছেন। ইতোমধ্যেই এক রোগীকে ভুল চিকিৎসা দিয়ে আবহেলা ও অসদাচারন করার অভিযোগে তদন্ত পূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন পুর্বক আদালতে অবহিত করতে বলা হয়েছে। জবাব চেয়েছেন বিচরক। তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথেও অসৌজন্য মূলক আচরণ করার অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানায়, পিরোজপুরের এক মন্ত্রীর ঘনিষ্টজন বলে পরিচয় দিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। এমনকি তার দাপটে কর্মকর্তারাও তটষ্ট থাকেন বলে জানাযায়। কোন কিছুই তোয়াক্কা করছেন না তিনি। বেশ কয়েকটি অভিযোগ সুত্রে অনুসন্ধানে জানাগেছে, জেলার রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পোস্টিং হয় মেডিকেল অফিসার জিন্নাত আরা মেহেরীনের। করোনা কালীন সময়ে তার পোষ্টিংয়ের অন্যতম শর্ত ছিল কর্মস্থলে কমপক্ষে ২ মাস থাকতে হবে। কিন্তু তিনি রাজাপুরে পোষ্টিং নিয়েই ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে যোগদান করেন। সদর হাসপাতাল চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদেরকে গণহারে প্রাইভেট ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন পার্সেন্টিজ। এ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে রোগীদের সাথে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ সবারই মুখে মুখে। রয়েছে ভুল চিকিৎসারও অভিযোগ। জেলা জজ আদালতের কর্মচারী, পুলিশ সদস্যসহ হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা নেওয়া রোগীরা এ চিকিৎসকের আচরণে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
জানাযায় গত ২৩ জুলাই ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতের রেকর্ড সহকারি খাইরুল ইসলাম হাসাপাতালের তত্তাবধায়ক বরাবরে চিকিৎসক মেহেরিনের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা, ভুলচিকিৎসা ও অসদাচারনের অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, আমি কদিন ধরেজ্বর ও কাশিতে ভুগ ছিলাম। গত ১৭ জুলাই ডা. মেহেরিনের হাসপাতাল চেম্বারে চিকিৎসার জন্য যাই। কিন্তু তিনি আমার কথা না শুনে জ্বর, প্রেসার না মেপে ও কোন পরীক্ষা না করেই ওষুধ দেন। এ সময় তাকে ডেংগু জ্বরের পরীক্ষা লিখে দিতে বললে তিনি আমার সাথে দূর্ব্যবহার করেন। তার দেওয়া ওষুধ খেয়ে খাইরুলের অবস্থার আরো অবনতি হয়। এরপর ১৯ জুলাই আবার তার তার হাসপাতাল চেম্বারে গেলে তিনি আমাকে দেখে তেলে বেগুনে জলে উঠেন। একপর্যায়ে আমি রুম থেকে না বেরুলে তিনি কোন রোগী দেখবেন না বলেও হুমকী দেন। একপর্যায়ে আমি হাসপাতালের আরএমও’র স্বরণাপন্ন হলে তিনি আমাকে ডেঙ্গু জ্বর ও কাশির পরীক্ষা করাতে দেন। পরীক্ষায় রিপোর্ট নেগেটিভ এলে তার ব্যবস্থাপত্রের ওষুধ খেয়ে সুস্থ হই। এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এক পত্রে তত্তাবধায়ককে অভিযোগ কারি খাইরুল ইসলামের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিয়ে আদালতকে অবহিত করতে বলেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে ডা. জিন্নাত আরা মেহেরীনের নম্বরে ফোন দিলে প্রথমে তিনি তার স্বামীর সাথে কথা বলতে বলেন। পরে তিনি বলেন, একজনের ভুল চিকিৎসার কথা বললেই হবেনা। কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বলতে হবে এবং লিখিত থাকতে হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে একটি শোকজ দিয়েছেন। আমি তাদের নিকট আমার জবাব দিব বলে মোবাইল ফোন কেটে দেয়।
প্রকৌশলী মো জাকারিয়া নামে ডা. জিন্নাত আরা মেহেরীনের স্বামী পরিচয়ে ফোন দিয়ে বলেন, কোন অভিযোগের ভিত্তিতে বিচারক এই আদেশ দিলেন? এই আইন আমার জানা নেই। তিনি কি কোন মামলা করেছেন? কোন অভিজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া কিভাবে বললেন এটা ভুল চিকিৎসক? আর এই গোপন তথ্য কিভাবে প্রকাশ হলো? আপনাদের যা ইচ্ছে তাই প্রকাশ করেন। এ নিয়ে নিউজ প্রকাশ হলে আমি এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিব।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাক্তার শামীম আহমেদ বলেন, আমি নতুন যোগদান করে কিছু অভিযোগের কথা শুনেছি। এসব ব্যাপারে খতিয়ে দেখছি। আর রোগীদের অহেতুক টেস্টের ব্যাপারে সব ডাক্তারদেরই সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। ডা: জিন্নাত আরা মেহেরীনের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতের রেকর্ড সহকারী মো: খাইরুল ইসলামের একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডা. আবুয়াল হাসানকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি কমিটি করে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তবে তার আচারনগত সমস্য আছে।