ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনে নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইসের সঙ্গে বৈঠকের পর আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান। আইনমন্ত্রী বলেন, আমি গত সোমবার যে কথা বলেছি গোয়েন লুইসের সঙ্গেও সাইবার নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে একই কথা বলেছি। একটি দফার মধ্যে আছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে রহিত করা হয়েছে এবং একে রহিত করা হবে। কিন্তু কথা হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মধ্যে যেসব টেকনিক্যাল ধারা ছিল, সাইবার নিরাপত্তা আইনেও সেগুলো আছে। তিনি বলেন, আমি সব সময় বলে এসেছি, এটি পরিবর্তন করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনও হয়নি। আবার কেউ যদি বলে সম্পূর্ণভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করা হয়েছে, সেটাও সম্পূর্ণভাবে ঠিক হবে না। কিন্তু পরিবর্তন হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, পরিবর্তনগুলো এতই বেশি ছিল যে, তখন যদি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামটাই রাখতাম- তাহলে হতো ডিজিটাল নিরাপত্তা সংশোধিত আইন। মানে ডিজিটাল নিরাপত্তা সংশোধিত আইন। এটি তখন কনফিউজিং হতো। সেজন্য এটাকে সম্পূর্ণ পাল্টিয়ে নতুন নামটা রাখা হয়েছে এর ব্যাপ্তি বাড়ানোর জন্য। সেজন্য এর নাম সাইবার নিরাপত্তা আইন দেওয়া হয়েছে। আগে যে মামলাগুলো হয়েছে সেগুলোর কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেগুলো নিয়ে আমরা চিন্তা ভাবনা করবো। পুরনো আইনে যে শাস্তি রয়েছে, সে শাস্তিই আদালত দিতে পারেন। কিন্তু সেখানে আমরা চিন্তা-ভাবনা করবো। এই আইনে যেহেতু শাস্তির পরিমাণ কমানো হয়েছে এবং সেই কমানোটাই সরকার ও আইনসভার উদ্দেশ্য। সেই কমানোটা যাতে বাস্তবায়িত হয় সেই চেষ্টা আমরা করবো। আইনমন্ত্রী বলেন, বিএনপি সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে না পড়ে, না বুঝেই মন্তব্য করেছে। সাইবার নিরাপত্তা আইন জনগণের জন্য আরও ভোগান্তির কারণ হবে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এ নিয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে আমি ঢালাওভাবে মন্তব্য করতে চাই না। তারা জিনিসটি পড়েনি। যেহেতু তারা পড়েনি, তারা বোঝেনি বলেই এই মন্তব্য করেছে। অংশীজনরা দেখুক, আপনারাও দেখুন, তারপর আপনারা যদি আলাপ করতে চান...। আইনজীবীরা বলেছেন মানুষের হয়রানি কমবে না, আর পুলিশকে অবারিত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা আমাদের কোনো পদক্ষেপই ভালো মনে করেন না। কিন্তু আমাদের নেওয়া পদক্ষেপে দেশের ভালো হয়। মাহবুব হোসেন বলেন, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বেআইনি প্রবেশের অপরাধে এখন সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ডের বিধান আছে। সেটি কমিয়ে তিন বছর করা হয়েছে। এটি আগে অজামিনযোগ্য ছিল। এখন জামিনযোগ্য করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনে ৬০টি ধারায় অপরাধ, সাজাসহ বিভিন্ন বিষয় বিন্যস্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, সাইবার নিরাপত্তার জন্য যেসব ধারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ছিল, সেই ধারাগুলো প্রস্তাবিত আইনে অক্ষুণœ রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে অনেকগুলো ধারাকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে, যা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অজামিনযোগ্য ছিল।
এদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন করায় সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে শুনেছি, তা সত্য হলে আমি খুশি। মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের দপ্তরে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। আইনটিকে ভালোভাবে যাচাই করার মতো কারিগরি জ্ঞান সম্পর্কিত ব্যক্তি না আমি। কিন্তু এই পরিবর্তনেই আমি খুব খুশি। আইনে কী পরিবর্তন করা হয়েছে, তা আমাদের ভালো করে দেখতে হবে। তবে ঘটনা হচ্ছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এখন আর নেই, সেখানে নতুন আইন প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এ সময়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে মানবাধিকার ইস্যু নিয়েও তার কথা হয়েছে বলে জানান তিনি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তন নিয়ে আপনি খুশি কি না; জানতে চাইলে গোয়েন লুইস বলেন, আমি টেকনিক্যাল পারসন না, সাইবার নিরাপত্তা আইনটি দেখিনি। তবে তারা যা করেছেন, তা সত্যি প্রশংসনীয়। পরিবর্তন হয়েছে এটাকে তারা ভালো বলছেন, তবে তারা বাস্তবায়ন দেখতে চায় এমন প্রশ্নের উত্তরে আইনমন্ত্রী বলেন, যে নতুন আইনটা হয়েছে সেটা তিনি এখনও সম্পূর্ণভাবে দেখননি। সেটা তিনি দেখননি বলেই সম্পূর্ণভাবে কমেন্টস করতে পারছেন না। এটার যে পরিবর্তন এসেছে সেটা তিনি শুনেছেন। যেটা শুনেছেন সে পরিবর্তন যদি হয়ে থাকে তাহলে সেটা ভালো এবং খুশি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।