বাল্যবিবাহের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ প্রথম এবং বিশ্বে অষ্টম। বাংলাদেশে ৫১ শতাংশ কিশোরী বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ বছর হওয়ার আগে বিয়ে হয়েছে ৩ কোটি ৪৫ লাখ কিশোরীর আর ১৫ বছর হওয়ার আগে বিয়ে হয়েছে এক কোটি তিন লাখ কিশোরীর। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ইউনিসেফ পরিচালিত ‘বাল্যবিবাহের বন্ধের কার্যক্রম দ্রুততর করতে বৈশ্বিক কার্যক্রম প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। বিভিন্ন জরিপে দেখা যায় করোনা মহামারির সময় দেশে বাল্যবিবাহের হার বেড়েছিল। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাল্যবিবাহের ওপর ইউএনএফপির এক জরিপ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মেয়েদের বিয়ের হার ২০২১ সালে আগের বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেড়েছিল। কোভিডের প্রাদুর্ভাবে ওই দুইবছর এই বয়সী প্রায় ২৭ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়েছে। বর্তমানে বিশে^ বেঁচে আছে বাল্যবিবাহের শিকার প্রায় ৬৪ কোটি নারী। প্রতিবছর বিশে^ অন্তত ১ কোটি ২০ লাখ কিশোরীর বাল্যবিবাহ হয়। পাঁচ বছর আগে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাল্যবিবাহের হার ছিল ২১ শতাংশ। বর্তমানে এই হার ১৯ শতাংশ। এই অগ্রগতির পরও ২০৩০ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ অবসানের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা পূরণ করতে হলে বিশ্বে বাল্যবিবাহ কমানোর গতি ২০ গুন বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের বাল্যবিবাহ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ক্রিশ্চিন রুখস বলেন, এশিয়ান বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি-সংখ্যক বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটছে। বাল্যবিবাহ বাড়লে কম বয়সে গর্ভধারণের ঝুঁকি বাড়ে। বাংলাদেশে প্রতি হাজারে ৭৪ টি শিশুর জন্ম দিচ্ছেন ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মেয়েরা। আর অল্প বয়সে গর্ভধারণের ফলে মা শিশুর দুজনেরই মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭ অনুসারে, ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়ে এবং ২১ বছরের কম বয়সী ছেলেদের বিয়ের জন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক ধরা হয়েছে। বাল্যবিবাহ নিরোধ বিধিমালা ২০১৮ অনুসারে, বিশেষ বিধানের আওতায় প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ের বিয়ে দেওয়া যাবে। সরকারের জাতীয় কর্মপরিকল্পনা অনুসারে, ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বাল্যবিবাহের নির্মূল এবং ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েদের বাল্যবিবাহ এক-তৃতীয়াংশ কমানোর লক্ষ্য ছিল। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ পুরোপুরি নির্মূলের অঙ্গীকার রয়েছে। লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলও বাল্যবিবাহ রোধে পিছিয়ে পড়ছে। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে ওই সব অঞ্চল বাল্যবিবাহের দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম অঞ্চলে পরিণত হবে। বাল্যবিবাহ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, পূর্ব ইউরোপ ও মধ্যে এশিয়ার অগ্রগতিও স্থবির হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, বাল্যবিবাহ রোধে বাংলাদেশ অগ্রগতির পরও বালিকাবধূর সংখ্যা বিস্ময়কর। বাল্যবিবাহের মাধ্যমে অসংখ্য মেয়ের শৈশব কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাদের স্কুলে যাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। শিশু কন্যাদের বিয়ে দেওয়ার চিন্তা থেকে বের হয়ে, তাদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। যার মধ্যে লুকায়িত আছে একটি দেশের সাফল্য। তারা যেন নিজেদের প্রতিভা বিকাশ করার সুযোগ পায়, সেই প্রকল্পে সকলকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে।