বাজার ব্যবস্থায় একটি পণ্য উৎপাদিত হওয়ার পর কৃষক থেকে ফড়িয়া বা বেপারী বা পাইকারি ব্যবসায়ী সরাসরি ক্রয় করে থাকেন। ফড়িয়া বা বেপারী বা পাইকার এদেরকে মধ্যসত্বভোগী ব্যবসায়ীও বলা হয়ে থাকে। তারা ক্রয়কৃত পণ্যটি সরাসরি আড়তদারের নিকট বিক্রি করে থাকেন। আড়তদার লাভের উপর নির্দিষ্ট কমিশনে খুচরা বা পাইকারি ব্যবসায়ীদের নিকট পণ্য বিক্রয় করে থাকেন। খুচরা ব্যবসায়ীরা সরাসরি কৃষক বা ফড়িয়া, বেপারী ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও পণ্য কিনে থাকেন। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে এই মধ্যস্থ ব্যবসায়ীদের কারণে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যর ন্যায্য দাম পাঁচ্ছেনা আবার সাধারণ ভোক্তাদের চড়া দাম দিয়ে পণ্য কিনতে হচ্ছে। এসব ব্যবসায়ীদের কারণে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর দিনেদিনে প্রতিকূল প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বাজারে কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে মধ্যসত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। ফলে প্রান্তিক কৃষক পাঁচ্ছে খুবই কম দাম আর ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। ভোক্তা পর্যায়ে পণ্য বিক্রি হচ্ছে তিন-চার গুণ বেশি দামে। ফলে লাভের সব টাকা চলে যায় মধ্যস্থ ভোগীদের হাতে। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় প্রান্তিক পর্যায় থেকে ৩-৪ হাত ঘুরে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সবজি উঠছে ভোক্তার ব্যাগে। সবজির দাম বৃদ্ধির প্রধান কারণ এই মধ্যসত্বভোগীরা। কৃষকের জমি থেকে গ্রাম পর্যায়ের মধ্যস্থ ব্যবসায়ীরা সবজি কিনে প্রথমে নিয়ে যাচ্ছে জেলা বা উপজেলা পর্যায়ের পাইকারি বাজারে। সেখানকার পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা ট্রাকে ভর্তি করে পাঠাচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে। একেক ধাপে সবজির দাম বেড়ে যাচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। মধ্যসত্বভোগীদের এই অতিরিক্ত মুনাফার প্রবণতার কারণেই বাজারে পণ্যর দাম এত চড়া। আবার দেখা যায় মধ্যসত্বভোগীরা মৌসুমের সময় কম মূল্যে কৃষকের কাছ থেকে কৃষিপণ্য কিনে নিজেদের কাছে ধরে রাখছে। পরে বাজারে কৃত্রিম পণ্য সঙ্কট তৈরি করে পরে সেগুলো ধীরে ধীরে দাম বাড়িয়ে বাজারে ছাড়ে। ফলে একদিক দিয়ে যেমন কষ্ট করে পণ্য উৎপাদনকারী কৃষকরা তাদের শ্রমের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অন্য দিকে ভোক্তাদের কষ্টে অর্জিত অর্থ গুটিকয় অসাধু ব্যবসায়ীদের পকেটে চলে যাচ্ছে। এই অসাধু ব্যবসায়ীদের এখনি থামানো না গেলে ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এদের থামাতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারকে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পণ্য কিনে খুচরা বাজারে বিক্রি করতে হবে। এতে করে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের একচেটিয়া প্রাধান্য ভেঙে নতুন বাজার ব্যবস্থাপনা সৃষ্টি হবে। কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হলে দেশে কোল্ড স্টোরেজের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পণ্য সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা থাকলে কৃষক পণ্য ধরে রেখে পরে বিক্রি করতে পারবে। এতে কৃষক লাভবান হবে। বাজারগুলোতে নিয়মিত তদারকি অভিযান পরিচালনা করতে হবে। সর্বোপরি একটা কথা মনে রাখতে হবে কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। তাই কৃষকের ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে।