গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে অনেক দূর এগিয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতের যৌথ অবদানের কারণেই দেশের এ অগ্রগতি। তবে দেশকে আরও উন্নয়নশীল করতে হলে দেশে নিরাপদ খাদ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি। কেননা সব কিছুর পরেও খাদ্য শৃঙ্খল ও নিরাপদ খাদ্য ঠিক রাখতে হবে আমাদের। আর এজন্য সকল পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত প্রয়োজন। তবে ‘খাদ্য নিরাপত্তা মানেই শুধু হোটেল রেস্টুরেন্ট নয়; চাল, গম, তেল ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত এখানে সম্পৃক্ত। তাই আপৎকালীন মজুদ ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলো চালিয়ে নিতে সরকারি গুদাম বাড়ানো দরকার। শত দুর্যোগেও খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ রাখা। তাই খাদ্য মজুত সক্ষমতা বাড়ানো, কৃষকের উৎপাদিত খাদ্যশস্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিতরণযোগ্য চাল সময়মতো সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছানো ও টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ইতোমধ্যে বর্ধিত মজুতের জন্য ১৯৬ খাদ্যগুদামের অতিরিক্ত আরও নতুন সাইলো এবং খাদ্যগুদাম নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছেন। প্রকল্পের কাজ শুরু ও হয়েছে এবং তিন বছরের মাথায় আগামী ২০২৬ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এদিকে তিন দফা সময় এবং ব্যয় বাড়ানোর পরও এখনো ৮টি খাদ্যগুদাম নির্মাণের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। বরং ১০ বছর শেষে বাস্তবায়ন অর্ধেকেরও কম। আর পরিকল্পনায় দুর্বলতার কারণে একটি গুদাম নির্মাণের কাজ শেষ পর্যন্ত প্রকল্প থেকে বাদ দিতে হয়েছে। দুই দফা সময় এবং ব্যয় বাড়ানোর পরও সর্বশেষ সংশোধন অনুযায়ী ৮টি খাদ্য গুদাম নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। গত এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সাইলো নির্মাণের বাস্তবায়ন অগ্রগতি ৭ শতাংশেরও কম। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ছিল গলদ। নকশায়ও ছিল ভুল। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে ব্যয় প্রাক্কলন বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। নির্ধারিত মেয়াদে শেষ হওয়ার পরও দুই দফা সময় বাড়ানো হয়। আগামী অক্টোবরে সর্বশেষ মেয়াদও শেষ হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে ব্যয়ও বাড়তে থাকে। ১ হাজার ৯২০ কোটি টাকার ব্যয় প্রাক্কলন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। ৬৫ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব জোগান। তবে যত যাই হোক না কেন, সরকারের মাথায় রাখতে হবে- দেশে মানুষ বাড়ছে, খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে। তাই খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে শস্য সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক গুদাম নির্মাণ অত্যন্ত প্রয়োজন।