শেরপুরে এ যেন এক বিশাল কান্ড! তিন ফুট উচ্চতার এক
প্রতিবন্ধীর বরের সাথে বিয়ে হলো পাচ ফুট উচ্চতার সুস্থ কনের সাথে। কনে
এতে অনেক খুশি। তাদের দাম্পত্য জীবনের জন্য দোয়া চেয়েছেন সকলের কাছে।
ভাতশালার খোরশেদ আলম ও পৌরসহরের দিঘারপাড় মহল্লার বর্ষার সাথে বিয়ের পর
১২ আগস্ট খোরশেদের বাড়িতে হয় বৌভাত অনুষ্ঠান। আর দাওয়াতি অতিথি ছাড়াও
তাদের বিয়ে দেখতে মানুষের ঢল।
জেলা সদরের ভাতশালা ইউনিয়নের মধ্যবয়ড়া গ্রামের মোহন মিয়া ও খোদেজা বেগমের
সন্তান প্রতিবন্ধী খোরশেদ আলম। তিনি উচ্চতায় তিন ফুট। খোরশেদরা চার
ভাই-বোন। তাদের তিনজন সুস্থ ও স্বাভাবিক। খোরশেদ হয় শারীরিক প্রতিবন্ধী।
দারিদ্রতার কারণে ৫ম শ্রেণির বেশি লেখা পড়া করা হয়নি তার। আর নানা জায়গায়
ঘুরাঘুরি করে কেউ তাকে কোন কাজ দেয়নি। অবশেষে ১৪ বছর আগে শহরের তিনআনী
বাজারের একটি মোটরসাইকেলের গ্যারেজে শ্রমিক হিসেবে কাজে দেয় আমিনুল ইসলাম
নামের এক গ্যারেজ মালিক। এরপর থেকে ওর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। কারোর
কাছে হাত পাততে হয়নি। এখন তার আয় ইনকামও বেশ ভালো। শহরের কয়েকজন
মোটরমেকানিকের মধ্যে নামকরা সে একজন। তার আয় রোজগারেই চলে তার পরিবার।
খোরশেদের দাদী বলেন, আমার নাতী খুব ভালো মানুষ। সে আমাদের সবাইকে চালায়।
আমি তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চাই। মামাতো ভাই জাবেদ আলী বলেন, খোরশেদ
একজন প্রতিবন্ধী। সে অনেক ধুমধামে বিয়ে করেছে। ইতঃপূর্বে তারজন্য অনেক
মেয়ে দেখা হয়েছিল। কিন্তু তার শারিরীক প্রতিবন্ধকতার কারণে রাজি হয় নাই।
এবার একটা মেয়ে এবং মেয়ের পরিবার রাজি হওয়ায় তার বিয়ে হলো। তাদের এ বিয়ে
দেখার জন্য অনেক মানুষ আসতেছে। তার এ বিয়েতে আমরা খুবই আনন্দিত। আমার ভাই
ছোট থেকে অনেক কষ্ট করে নানা প্রতিকুলতার মধ্যে জীবন চালিয়েছে। তার জীবন
এত সহজ ছিলো না। সে ১৪ বছর থেকে নিজেই আয় রোজগার করে। তার পরিবারকে
চালায়। সে ভালো মোটরসাইকেল মেকানিক। আমরা তাদের বিবাহিত জীবনের জন্য
সকলের কাছে দোয়া চাই। দেখ দেখ করে খোরশেদের বয়স আটাশ বছর। বিয়ের জন্য
মেয়ে দেখা শুরু করে তার স্বজনরা। কিন্তু মেয়ে পাচ্ছিলনা তারা। তাই খোরশেদ
ঘটক বুধু মিয়ার কাছে ধর্ণা দেয় একটা মেয়ে ঠিক করে দিতে। ঘটক আড়াইশ পাত্রী
দেখে শেরপুর শহরের দীঘারপাড়ের দরিদ্র বাচ্চু মিয়াকে বলে কয়ে রাজি করিয়ে
তার মেয়ে বর্ষার সাথে বিয়ে ঠিক করে।
ঘটক বুধু মিয়া জানান, তিন ফুট উচ্চতার খোরশেদ আলমের জন্য দুইশ থেকে আড়াইশ
মেয়ে দেখেছেন। একজনের বাবা রাজি হলে মা রাজি হন না আবার মা রাজি হলে মেয়ে
রাজি হন না। অবশেষে অনেক কষ্টের পর মিলছে পাত্রী। তিনি এ বিয়ে করাতে পেরে
খুবই খুশি। এক লাখ বিশ হাজার টাকা দেনমোহরে বিয়ে কাবিন হয় ১১ আগষ্ট।
শনিবার (১২ আগস্ট ) বরের বাড়িতে আয়োজন করা হয় বৌ ভাতের। এতে পাঁচশো লোককে
ভূরি ভোজ করানো হয়। বিয়েতে খোরশেদ নিজেই খরচ করেন তিন লাখ টাকা। এতেও
খুশি খোরশেদ ও তার স্বজনরা। সবার দোয়া কামনা করেন নব দম্পত্তি।
চাঞ্চল্যকর এ বিয়েতে দাওয়াত খেতে পেরে আনন্দিত ও উচ্ছাসিত সবাই।
মোটরসাইকেল গ্যারেজ মালিক মানিক মিয়া বলেন, খোরশেদ মোটরমেকানিকে অনেক
ভালো কাজ করে। সে প্রতিবন্ধী হলেও তার বিয়ের আয়োজন ছিলো চোখে পরার মত।
আমরা দাওয়াত এসে খুবই আনন্দিত। মোঃ আক্রাম হোসেন বলেন, এ প্রতিবন্ধী
ছেলেটা যে বিয়ের আয়োজন করেছে তা একজন সুস্থ সবল লোকও করতে পারে না। অনেক লোকজনের দাওয়াত ছিলো। আর দাওয়াতি লোকের চেয়ে তাদের বিয়ে দেখতে আসা মানুষের ভিড় বেশি।