ঘন ঘন দুর্ঘটনা, ছিনতাই ও পাথর নিক্ষেপের কারণে ট্রেনযাত্রা হয়েছে অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ। আন্তনগর ট্রেনগুলোকে যাতায়াতের সুযোগ করে দিতে বিভিন্ন কমিউটারসহ লোকাল ট্রেনকে যত্রতত্র স্টপেজ করানো হয়। রাতে কিংবা দিনে স্টেশন ছাড়া বিভিন্ন নির্জন স্থানে এসব ট্রেন ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মতো অপেক্ষা করে। অনেক যাত্রী ট্রেন থেকে নিচে নামে। এই সুযোগে ছিনতাইকরীরা যাত্রীদের মোবাইলসহ মূল্যবান জিনিস ছিনিয়ে পালিয়ে যায়। রেলওয়ে পুলিশ জানান, কমিউটার কিংবা লোকাল ট্রেনগুলোয় পুলিশ পাহারা না থাকার কারণে স্টেশন ছাড়া অন্য কোথাও ট্রেন স্টপেজ করানো হলে সেখানে নিরাপত্তার ঘাটতি থেকে যায়। জনবল-সংকটের কারণে আন্তনগর ট্রেনগুলো ছাড়া অন্য কোনো ট্রেনে রেলওয়ে পুলিশ থাকে না।
জানা গেছে, রেলের ২ হাজার ৯৫৬ কিলোমিটারের মধ্যে অরক্ষিত ৭০০ কিলোমিটার। যার মধ্যে ৯৭টি স্পট ভয়ংকর হিসেবে চিহ্নিত। যেখানে প্রতিনিয়ত ছিনতাই, ডাকাতি, ঢিল ছোড়ার মতো ঘটনা ঘটছে। জায়গাটি নির্জন হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সুযোগ পায় ছিনতাইকরীরা। এতে ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশন থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত রেলপথ ভ্রমণকারীদের জন্য দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। আর এর জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এবং থানা-পুলিশের গাফিলতিকেই দায়ী। কেননা- এত কিছুর পরেও কেন এই ঝুঁকি কমাতে কোথায় হামলা বা ছিনতাই হয়, সেটা জেনেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কেন নেন না? তারা কি ভুলে গেছেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের।
ট্রেনে পাথর ছোঁড়া ও ছিনতাইয়ের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ২০২০ সালে ছিনতাইকারীদের হাতে রাকিবুল ইসলাম নামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসার পথে নিহত হন। ২০১৮ সালে খুলনার বেনাপোল রোডে কমিউটার ট্রেনে দুর্বৃত্তদের ছোঁড়া পাথরের আঘাতে চলন্ত ট্রেনের পরিদর্শক বায়েজিদ মারাত্মক আঘাত পান এবং মারা যান। সৈয়দপুরে দুর্বৃত্তদের ছোঁড়া পাথরে এক ছোট শিশুর চোখ নষ্ট হয়ে যায়। এই রাষ্ট্রীয় পরিবহনেও যদি যাত্রীরা নিরাপদ না থাকেন, নিরাপত্তা কোথায়? চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করা দ-নীয় অপরাধ। তারপরেও ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার ও জেলখানা থেকে বেরিয়ে আসার এই মহড়া কত দিন চলবে? তাদের কেন শাস্তির আওতায় আনা যাচ্ছে না? তাই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এবং নিরাপত্তা আইন বাহিনীকে আহ্বান করছি, যেসব স্থানে ছিনতাই ও পাথর নিক্ষেপের ঘটনা বেশি ঘটে, সেসব স্থানে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। প্রয়োজনে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হোক।