চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ নতুন নয়। সর্বোচ্চ মানের সেবা প্রদানের আশ্বাসে প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয় করে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করা হলেও হাসপাতাল গুলোতে চলে চিকিৎসা সেবার নামে বাণিজ্য। এছাড়াও চিকিৎসা নিতে গিয়ে অন্যায় আচরণ, অবহেলা বা ভুল চিকিৎসায় রোগীর অঙ্গহানি অথবা প্রাণ হারানোর মতো ঘটনায় শিকার হয়েছেন অনেকেই। অথচ চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীর সুরক্ষায় সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই। যদিও একজন চিকিৎসকের কাজ রোগীকে সুস্থ করে তোলা, মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া নয়। তবে অনিচ্ছাকৃত ভুল বা অজ্ঞতাবশত ভুল হতে পারে।’ তবে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ মানেই সব ভুল তাও কিন্তু নয়। অনেক চিকিৎসকদের অবহেলা আর ভুল চিকিৎসার কারনেও এসকল দূরঘটনা ঘটে থাকে। এর একমাত্র কারন, অপচিকিৎসায় কঠোর কোনো শাস্তির নজির এ দেশে না থাকা। ফলে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার মান নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তুষ্টি রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও প্রতি বছর বহু মানুষ চিকিৎসার জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতে যায়। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছে অবস্থাপন্ন মানুষ। অর্থে কুলালে আরও বেশি মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেত। চিকিৎসাসেবার মানের ব্যাপারে সন্দেহ থাকার কারনেই মানুষ বিদেশে যাচ্ছে। এছাড়াও আমাদের দেশে চিকিৎসকদের চিকিৎসাসেবা বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। রয়েছে চিকিৎসকদের কমিশন বাণিজ্যও। এ কারণে চিকিৎসাব্যয় বহুগুণ বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে গরিব মানুষ চিকিৎসা খরচ মেটাতে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে প্রাইভেট হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ সেবা ও মানবিকতা ভুলে কেবলই বাণিজ্য করছেন, যা অনৈতিক। এ কমিশন বাণিজ্য বন্ধ করা গেলে অবশ্যই রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় ও হয়রানি অনেকাংশে কমে যাবে। চিকিৎসায় অবহেলাকে আইনি কাঠামোর আওতায় আনার প্রয়োজন। সেজন্য একটি পূর্ণাঙ্গ, একক এবং স্বতন্ত্র আইন গড়তে হবে। রোগী এবং স্বাস্থ্যসেবা দানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সুরক্ষা আইন’ নামে যে আইন প্রস্তাব করেছিল সরকার। কিন্তু চিকিৎসকদের আপত্তির কারণেই তা এখনও পাস করা সম্ভব হয়নি। সে আইনটিকে কার্যকর করতে হবে। রোগীর স্বজনরা চাইলে বিএমডিসির কাছে প্রতিকার চাইতে পারবে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। যেহেতু দেশে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু ও এর প্রতিকারের ব্যবস্থা খুবই দুর্বল তাই এর প্রতিকার দ্রুত বের করা জরুরি এবং সঠিক চিকিৎসা দেওয়ার বদলে ভুল চিকিৎসা দিয়ে যারা বছরের পর বছর এসব হাসপাতাল চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।