কারাগারে অপরাধীদের পাঠানো হয় সংশোধনের জন্য। তবে কারাগারে এখন চর্চা হয় অনিয়ম, দুর্নীতি ও নানাবিধ অপরাধের। যেখানে তাদের অন্ধকার জীবন থেকে নতুন করে আলোর পথ দেখানোর জন্য নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অন্তরীণ করে রাখা হয়। কিন্তু সম্প্রতি সেই অপরাধীদের শোধনের জায়গাটিই হয়ে উঠেছে অপরাধস্থল। অর্থের বিনিময়ে এখানে মাদক, নারী, মোবাইল সুবিধাসহ সব ধরনের আরাম-আয়েশ মিলছে বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। পদে পদে অনিয়মে ভরা কারাগারগুলোতে পুরনো কয়েদিরা নতুন কয়েদিদের ওপর নির্যাতন চালায়, দাগি আসামি ও ভিআইপিসহ শীর্ষ সন্ত্রাসীদের চলে রাম রাজত্ব। এসব ঘটনায় অনেকের শাস্তিও হয়েছে, তবুও কাঁচা পয়সার মোহে নিজেকে বিকিয়ে দেন কেউ কেউ আর এর ফলেই সুযোগ পায় অপরাধীরা। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে মোট ৫ হাজার ৮২১ জন বন্দী আছেন। কাশিমপুরের এ কারাগারে জেলার ও জেলারের অনুগত ব্যক্তিরা আসামি ও বন্দীদের সামান্য কটুকথা বা অন্যায় বা ত্রুটির জন্য শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। নির্যাতনের পর জখমের চিহ্ন মুঠোফোনে ধারণ করে আসামিদের স্বজনকে দেখিয়ে আরও নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করা হয়। কারাগারগুলোর দায়িত্বে থাকা অনেক কর্মকর্তা এর পৃষ্ঠপোষক হয়ে উঠেছেন। কারা কর্তৃপক্ষের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নিচের দিকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে তারা অপরাধ করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছেন। এছাড়াও সাবেক যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়াকে কাশিমপুরে রাখা হলে তিনি সেখানেও এক অপরাধ জগৎ গড়ে তোলেন। কাশিমপুর কারাগারে স্বল্প সময় অবস্থানের মধ্যেই পাপিয়া সেখানেও একটি অপরাধ চক্র গড়ে তোলেন। একজন শিক্ষানবিস আইনজীবীকে নানা ধরনের নির্যাতনের সূত্র ধরে এ খবর বাইরে আসে। এ নিয়ে কারাগারে একটি সালিশ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সেখানে রীতিমতো সংঘর্ষ বেধে যায়। কারা কর্তৃপক্ষের লোকজনও এতে জড়িয়ে পড়েন। জানা যাচ্ছে, বন্দীদের সেল পরিবর্তনের নিয়ন্ত্রণ নেন পাপিয়া। যাকে তাকে গালিগালাজ আঘাত করার পুরনো অভ্যাস এখানেও চালু করেন। তার কক্ষে তল্লাশি করে স্মার্টফোন ও চার্জার পাওয়া গেছে। একজন দাগি আসামি কিভাবে কারাগারের অভ্যন্তরে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলেন; তা খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, খোদ শীর্ষ কর্মকর্তাদের একটি অংশ তার পৃষ্ঠপোষক। কারাগারের অভ্যন্তরে সংঘর্ষের পর জেলসুপার ও ছয় কারারক্ষীকে বিভিন্ন জায়গায় বদলি করা হয়েছে। পাপিয়াকে অন্য কারাগারে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানো হয়। এভাবে মূল অপরাধীদের বাঁচানো হয়। তবে এগুলো নিয়ে কখনোই স্বচ্ছ তদন্ত হয় না। বরাবর পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়। তাই পাপিয়াকে নিয়ে ওঠা অভিযোগগুলো একইভাবে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হচ্ছে কি না এর একটি বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। অপরাধ যেই করুক না কেন, তাকে বিচারের আওতায় আনা হোক। নয়তো, আমাদের সর্বনাশের আর কিছু বাকি থাকবে না।