টানা অতিবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের তেমুহনী এলাকায় বন্যার পানিতে ডুবে যায়। সেই সাথে ডুবে যায় নির্মানাধীন রেললাইনের অনেক অংশ। আগামী সেপ্টেম্বর ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে পর্যটন শহর কক্সবাজারে রেল যাওয়ার কথা। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় নির্মাণাধীন রেললাইনের একটি অংশে পাথর ও মাটি ভেসে গেছে। রেললাইন উঁচু-নিচু ও বাঁকা হয়ে গেছে। এই এলাকায় অন্তত চারটি স্থানে রেললাইন দেবে গেছে। কোথাও কোথাও এক-দেড় ফুট পর্যন্ত নিচে দেবে গেছে। নিচ থেকে পাথর ও মাটি সরে গিয়ে শূন্যে ভাসছিল রেললাইনের স্লিপারগুলো। গর্ত হয়ে যাওয়া অংশে পানি জমে ছিল। আবার কিছু অংশে রেললাইন ঠিক থাকলেও নিচে পাথর ছিল না। পাথর সরে যাওয়াসহ রেলবিটও খুলে গেছে। এ অবস্থায় সেপ্টেম্বরে ট্রেনে কক্সবাজার যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। চলাচলের আগে এমন উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য দায়ী অপরিকল্পিত রেলপথ নির্মাণ বলা যেতেই পারে। রেললাইনের কারণে পানিনিষ্কাশনের পথ আটকে যাওয়ায় এসব এলাকার বাড়িঘর ডুবে গেছে। যদি রেললাইনে পর্যাপ্ত কালভার্ট বা সেতু নির্মাণ করা হতো, তাহলে এত ক্ষতি হতো না। আর শুধু মাত্র রেলপথে ছোট ছোট কালভার্টও পানিনিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন এ ধরনের বৃষ্টি আরও হওয়ার আশঙ্কা আছে তখন রেললাইন আবার ডুবে যেতে পারে। পানিনিষ্কাশনের পথে রেললাইনের মাধ্যমে বাঁধ দেয়ায় পানি নামতে পারেনি। যেহেতু রেললাইন হয়ে গেছে, তাতে সংশোধনের তেমন কোনো সুযোগ নেই। এতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে রেলওয়ে পরিকল্পিতভাবে রেললাইন নির্মাণ করেছে কিনা। যে অঞ্চলে রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেখান দিয়ে বান্দরবনের পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানি দ্রুত নেমে এসে সাগরে গিয়ে পড়ে। রেললাইন নির্মাণের সময় তা বিবেচনায় নেওয়া দরকার ছিল। এখন রেললাইন করার কারণে পানিনিষ্কাশনের পথ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এতে বন্যার ব্যাপকতা বেড়েছে। মানুষকে যেমন ভুগতে হচ্ছে, তেমনি রেলের সম্পদ নষ্ট হয়েছে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প সরকারের অগ্রাধিকার (ফাস্ট ট্র্যাক) প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৮ শতাংশ। ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে ৮৮ কিলোমিটার অংশে রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। এখন বাকি আছে ১২ কিলোমিটার। সরকার ও সংশ্লিষ্টদের এটি মাথায় রেখে দ্রুত কাজ করার পদক্ষেপ নিতে হবে এবং কিছু যায়গায় সংশোধনযোগ্য কিনা সেটাও পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আর যদি সে সুযোগ থাকে তাহলে দ্রুত সময়ের মধ্যে তা নির্ভুলভাবে করতে হবে যাতে একই সমস্যায় আবরও পড়তে না হয়।