মূলত নদীপথে বালু বহনের জন্য বহুল ব্যবহৃত পরিবহনের নাম বাল্কহেড। সারা দেশের নদীপথে আতঙ্কের নাম বালুবোঝাই বাল্কহেড। বালুখেকোদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ায় নদীপথে বেড়েছে বাল্কহেড চলাচলও। দেশের বিভিন্ন নদীতে বেপরোয়া চলা বাল্কহেডের ধাক্কায় প্রতিনিয়তই ডুবছে যাত্রীবাহী নৌযান। নদীতেই প্রাণ যাচ্ছে মানুষের। পণ্য বিশেষ করে বালু বোঝাইয়ের পর বাল্কহেডের প্রায় পুরো কাঠামো পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ায় চলাচলের সময় শুধু ইঞ্জিনের দিককার সামান্য অংশ পানির ওপরে ভেসে থাকে এবং তা খালি চোখে দৃশ্যমান না হওয়ার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। তাই দিনের বেলা চলাচলের অনুমতি থাকলেও রাতে এই জান চলাচল সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু দেখা যাচ্ছে রাতে বাল্কহেড চলাচল বন্ধ থাকার নির্দেশনা থাকলেও বেশীরভাগ সময়ই তা মানা হচ্ছেনা। ফলে ঘটছে বড়ো ধরনের দুর্ঘটনা। অল্প কিছুদিন আগেই মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার রসকাটি এলাকায় তালতলা-গৌরগঞ্জ খালে বাল্কহেডের ধাক্কায় বনভোজনের একটি ট্রলার ডুবে নারী ও শিশুসহ ৯ জন মারা যায়। সম্প্রতি এই বাল্কহেডের ধাক্কায় ঢাকার সদরঘাটের কাছে বুড়িগঙ্গা নদীতে ডুবে যায় একটি ওয়াটার বাস যেখানে নিহত হয় তিনজন। তাছাড়া এই নিষিদ্ধ যানের ধাক্কায় কিছুদিন আগে যমুনার নির্মাণাধীন রেলসেতুর ৬নং পিলাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারি হিসাবে ৬৩৭৯টি নিবন্ধিত বাল্কহেডের কথা বলা হলেও সারা দেশের নদীতে চলছে প্রায় ১১ হাজার বাল্কহেড। আর এসব অবৈধ বাল্কহেড চলছে দক্ষ মাস্টারের পরিবর্তে অদক্ষ সুকানি দিয়ে। নেই কোন ফিটনেস। ফলে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা হারিয়ে যাচ্ছে তাজা প্রাণ। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় নৌ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর নামক দুটি সংস্থা ছাড়াও নৌ-পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে হাত করেই প্রভাবশালীদের মাধ্যমে চলছে অবৈধ এসব নৌযান। এতেকরে প্রতিদিনই অবৈধ বাল্কহেড জব্দ করা হলেও কিছুদিনের ভিতরেই সেগুলো আবার নৌপথ দাপিয়ে বেড়ায়। তাই প্রশাসনকে এখনি কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। এই বাল্কহেডের সাথে দেশের বহু মানুষের জীবিকা ওতপ্রোত ভাবে জড়িত তাই হটাত করে এই অবৈধ যান পুরোপুরি বন্ধ করা যাবেনা, ধীরেধীরে নিয়ন্ত্রণ করে কমিয়ে আনতে হবে। বাল্কহেড চলাচল শতভাগ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে প্রশাসনের পাশাপাশি বিআইডব্লিউটিএ, নৌ পুলিশ, থানা-পুলিশ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। নৌ-আইনের কঠোর বেবহার করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে জব্দক্রিত বাল্কহেডগুলো যেন পুনরায় নদীপথে ফিরে যেতে না পারে সেই দিকে লক্ষ রাখতে হবে। যাত্রীবাহী নৌযান চলাচলের রুটে যেন এই বিপদজনক যান চলাচল না করতে পারে সেই দিকে কঠোর নজরদারি করতে হবে। পাশাপাশি দায়িত্বশীলদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। দেশের নদীপথ ঝুঁকিমুক্ত রাখা জরুরি। আইন-অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে বিআইডব্লিউটিএ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সমন্বিতভাবে কঠোর পদক্ষেপ নেবে এটাই সবার প্রত্যাশা।