দেশে নানাভাবে নেটওয়ার্ক বিস্তার করে চলেছে জঙ্গিবাদী অপশক্তি। শক্তি সঞ্চয় করছে। নিজেদের ধ্বংসক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে। এখন সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় আছে আবারও দেশব্যাপী অন্তর্ঘাত সৃষ্টির জন্য। বিভিন্ন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অভিযানে তেমন কিছু আলামতও পাওয়া যাচ্ছে। গত সোমবার মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামে পরিচিত একটি জঙ্গি সংগঠনের ১৭ সদস্যকে স্থানীয় জনতা আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। তার আগে উপজেলার কর্মদা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিওয়ালি গ্রামের একটি বাড়িতে শুক্রবার রাত থেকে অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে আটক করেছিল পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। তারা সেখানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল। তাদের কাছ থেকে প্রচুর বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছিল। অভিযানের সময় সেখান থেকে কিছু সদস্য পালিয়ে গিয়েছিল, পরে তাদেরই আটক করে স্থানীয়রা। তারও আগে ঢাকা থেকে তাদের আরো কিছু সদস্যকে আটক করা হয়েছিল। এর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া নামের আরো একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়। অর্থাৎ নতুন নতুন নামে নতুনভাবে তারা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের শুরু গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শুরুতে আফগানিস্তান থেকে ফিরে আসা জঙ্গিদের হাত ধরে। তারপর তারা সময়ে সময়ে রাজনৈতিক আনুকূল্যও পেয়েছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে জঙ্গিদের ব্যাপক নাশকতা শুরু হয়। সারা দেশে একযোগে পাঁচ শতাধিক বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। রাজশাহীতে বাংলাভাই কয়েক হাজার জঙ্গি নিয়ে দিনের বেলা পুলিশের সামনেই ট্রাক মিছিল করেছিল। আদালতও তাদের হামলা থেকে রক্ষা পায়নি। বিচারক, আইনজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ বহু মানুষ নিহত হয় তাদের হামলায়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরাও তাদের হামলার শিকার হয়েছেন। তারা মানুষ মেরে উল্টো করে গাছে ঝুলিয়ে রেখেছে। নানাভাবে তারা তাদের নৃশংসতা প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের মানুষ সেই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ফিরে যেতে চায় না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অনেক কর্মকর্তা প্রায়ই বলেন, জঙ্গিদের বড় কিছু করার সামর্থ্য নেই। এ ধরনের আত্মতৃপ্তি প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই। মাত্র ৯ মাস আগে গত বছরের নভেম্বর মাসে ঢাকার আদালতপাড়া থেকে তারা সাজাপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়েছিল। মনে রাখতে হবে, তাদের মদদদান ও পৃষ্ঠপোষকতা করার মতো অনেক মানুষ আছে, রাজনৈতিক শক্তিও আছে। তাই জঙ্গিবাদ দমনে আরো বেশি তৎপর হতে হবে। পাশাপাশি গোয়েন্দা তৎপরতা অনেক বাড়াতে হবে। দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে।