সম্প্রতি কিছু ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে বলে জানা গেছে। সাধারণত এই তারল্য সংকট দেখা দেয় অর্থ সরবরাহের চেয়ে চাহিদা বেড়ে গেলে। কভিডের কারণে অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়েছিল, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। মনে হচ্ছে, অর্থনীতি দ্রুততার সঙ্গে আগের অবস্থানে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এর ফলে অর্থের চাহিদা বেড়ে গেছে। সে তুলনায় সরবরাহটা তাল মেলাতে পারছে না। ছয় মাস আগের তুলনায় অর্থনীতি এখন দ্রুত পিক-আপ করছে। আর এজন্যও ব্যাংগুলোতে তারল্য সংকট বাড়াতে পাড়ে বলে ধারণা করা যায়। এটা সাধারণত স্বল্প মেয়াদে হয়। কয়েক দিন, কয়েক সপ্তাহ এবং ক্ষেত্র বিশেষে কয়েক মাস চলতে পারে। হঠাৎ করে অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠলে তারল্য স্বল্পতা দেখা দিতে পারে, আবার কোনো দুর্যোগ বা বিশেষ কোনো আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির কারণেও হতে পারে। কোনো কারণে তারল্য স্বল্পতা বেশিদিন স্থায়ী হলে অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দীর্ঘ সময় ধরেই তারল্য সংকটে ভুগছে কারণ, আমানতের প্রবৃদ্ধির হার কমে গেছে। ফলে ব্যাংকে আমানত জমা হচ্ছে কম। এদিকে খেলাপি ঋণও বেড়ে গেছে। ফলে বাড়ছে ব্যাংকের ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ। এতে ব্যাংকের অর্থের একটি বড় অংশই আটকে গেছে। এ অবস্থায় অনেক ব্যাংকই তাদের মূলধন পর্যাপ্ততা যথাযথভাবে পূরণ করতে পারছে না। একই সঙ্গে প্রভিশনও চাহিদা অনুযায়ী রাখতে পারছে না। এসব কারণেই এখন ব্যাংকগুলো বেশি মাত্রায় ধার করছে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোও বৈদেশিক ঋণ ও আমদানি ব্যয় মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নগদ টাকায় ডলার কিনছে। ফলে ব্যাংক থেকে নগদ টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে যাচ্ছে। গত অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ১ হাজার ৩৫৮ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। এর বিপরীতে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে গেছে। গত জুলাইয়ে বিক্রি করেছে ১১৪ কোটি ডলার। এ খাতে চলে গেছে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা। এসব মিলে তারল্য সংকট বেড়েছে। যাদের স্বল্পমেয়াদি ঋণ বেশি দিতে হচ্ছে, তাদের ঘাটতিই বেশি হচ্ছে। আন্ত ব্যাংকের মাধ্যমে সে ঘাটতি পূরণ না হলে তাতে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করবেই। না হলে অর্থনীতি আবার স্থবির হয়ে যেতে পারে, এর গতি কমে যেতে পারে। এজন্য নগদ অর্থ প্রবাহ হচ্ছে এক ধরনের লুব্রিকেটিং এলিমেন্ট, যার ওপর দিয়ে অর্থনীতির চাকা ঘোরে। এই লুব্রিক্যান্ট যেন শুকিয়ে না যায় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। এমন অবস্থায় ব্যাংক চ্যানেলে চলমান টাকা ও ডলারের ক্রাইসিস কমাতে হলে দেশের টাকা পাঁচার হওয়াকে যেভাবেই হোক থামাতে হবে। এ বিষয়েও সরকারকে খুব সতর্ক হতে হবে।