ক্ষমতা যার বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের দখল তার। সর্বত্রই একই চিত্র। ক্ষমতা বদলায় জমিদারি তালুকের মতো হলের রাজত্বও বদলায়। বছরের পর বছর ধরেই এমন ব্যবস্থা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। হলে কে থাকবে কে থাকবে না এটিও অনেক ক্ষেত্রে ঠিক করে দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন। নিয়ন্ত্রণ করছে সব কিছু। তাদের কথা না শুনলে নানা হয়রানি আর নির্যাতনের শিকার হতে হয় শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো মূলত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শিক্ষার্থীদের নিরাপদ বাসস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই তৈরি করা হয়। যেখানে থেকে একজন শিক্ষার্থী পড়াশোনা শিখে নিজেকে ভবিষ্যতের জন্য যোগ্য করবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে সিট ছেড়ে দেবেন নতুনদের জন্য। হলের এসব লিপিবদ্ধ নিয়ম-কানুন অনেকটা রূপকথার গল্পের মতো শোনায় সমসাময়িক বাস্তবতায়। শিক্ষার্থীকে হলে রাখা, হল থেকে বের করে দেয়া, ক্যান্টিন, হলের দোকান ইত্যাদিসহ এসব আবাসিক হলের সমস্ত কর্মকাণ্ডই বড় ভাইদের নির্দেশেই পরিচালিত হয়। অনেক সময় বড় ভাইদের ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার হয়ে ‘মিথ্যা অভিযোগে’ শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে বাধ্য করা হয়। তবে শিক্ষার্থী নির্যাতন বেশিরভাগ ঘটনায় জড়িতরা কোনো ধরনের শাস্তি ছাড়াই পার পেয়ে যায়। ফলে বৈধ উপায়ে আবাসিক হলে ওঠা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য রীতিমতো অসম্ভব হয়ে উঠেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সিট পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়াও হলে নিয়মিত মাদকের আসর বসা ছাড়াও তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে অস্ত্রের ব্যবহার দেখা যায় নিয়মিত। এদিকে ক্যাম্পাসে বগিভিত্তিক রাজনীতি সক্রিয় থাকায় কিছুদিন পরপরই নিজেদের মধ্যে কোন্দলে জড়ায়। যার ফলে সংঘর্ষে জড়ালে আবাসিক হলের আসবাবপত্র ভাঙচুর ও লুটপাট করে প্রতিপক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত করার প্রবণতা রয়েছে গ্রুপগুলোর মধ্যে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে এই উপদ্রব-অত্যাচার কেন ভোগ করবেন? এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তাদের উচিত এ বিষয়ে তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। হল প্রশাসন যাদের নামে আসন বরাদ্দ করেছে, কেবল তারাই হলে থাকবে। অন্য কারও খবরদারি কিংবা আসন-বাণিজ্য সেখানে চলতে পারবে না। তাই প্রশাসনকে অনুরোধ করবো তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হোক। আবাসিক হলে এই জবরদখল প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় গ্রলোতেই ঘটছে, সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীরা এই অনাচারের শিকার।