উপকূল রক্ষা বাঁধের সংস্কার ও জরুরী রক্ষনাবেক্ষন কাজে নিযুক্ত হয়ে আইয়ুব আলী একের পর এক অনিয়ম, দুর্নীতি ও প্রতারনা করেছেন বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। নির্দিষ্ট সংখ্যক বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং না করে ভিন্ন প্রকল্পের কাজে তা ব্যবহারের অভিযোগ এ শ্রমিক সর্দারের বিরুদ্ধে। রাতের অন্ধকারে প্রকল্পস্থল থেকে খালি জিও ব্যাগ সরিয়ে নিয়ে তিনি কয়রা উপজেলায় কর্মরত শ্রমিক সর্দারের নিকট বিক্রি করেছেন বলেও অভিযোগ। এমনকি একবার গননার পর কৌশলে পুরানো সেসব বস্তার বালু নুতন বস্তায় ঢুকিয়ে দ্বিতীয় ‘বিল’ আদায়ের চেষ্টা করেছেন শ্রমিক সর্দার হয়েও সহঠিকাদারের দায়িত্ব পালন করা ঐ ব্যক্তি।
তবে একের পর এক এমনসব অপকর্ম করার পরও পানি উন্নয়ন বোর্ডের গুরুত্বপুর্ন প্রকল্পগুলো থেকে আইয়ুব আলী ‘ভূত’ যেন সরছে না। কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ও স্থানীয় শ্রমিক সর্দারদের সাথে সিন্ডিকেট গড়ে সে একের পর এক পাউবো’র কাজ করে চলেছে।
এদিকে উপকূল রক্ষা বাঁধ সংস্কার ও জরুরী রক্ষনাবেক্ষন কাজে একজন চিহ্নিত দুর্নীতিবাজের সংশ্লিষ্টতার ঘটনায় শংকার কথা জানিয়েছে স্থানীয়রা। তাদের দাবি সাম্প্রতিক সময়ে উপকূল রক্ষা বাঁধ গুরুত্বপুর্ন ইস্যুতে পরিনত হয়েছে। আইয়ুব আলীর মত অপকর্মের হোতাকে উপকূল রক্ষা বাঁধ সংস্কার কাজ থেকে দুরে রাখা উচিত। অন্যথা তার অধিক মুনাফার লোভের শিকারে পরিনত হয়ে উপকুলবাসীকে চড়া মুল্য দিতে হতে পারে।
দাতিনাখালী গ্রামের উৎপল কুমার মন্ডল জানায় এক বছর আগে দুর্গাবাটি এলাকায় বস্তা ডাম্পিং কাজের দায়িত্ব নিয়েছিল আইয়ুব। বুড়িগোয়ালীনি ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের ডানহাত হিসেবে পরিচিত ঐ শ্রমিক সর্দার সেসময় একবার গননা হওয়া বস্তা কৌশলে আড়াল করে। স্বল্প সংখ্যক বস্তা নির্দিষ্ট স্থানে ডাম্পিংয়ের প্রায় ছয় মাস পরে আড়ালকৃত বস্তার বালি দিয়ে নুতন বস্তা ভর্তি করার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে। সে সময় তদারকির দায়িত্বে থাকা একজন উপণ্ডসহকারী প্রকৌশলী আইয়ুব আলীর চুরি বিষয়ে জানতে পেরে পুরানো সে সব বস্তার বালু আটকে দেন।
আটুলিয়ার জোবায়ের হোসেনের অভিযোগ ইতঃপূর্বে দুর্গবাটি এলাকার অপর একটি প্রকল্পে ১২ হাজার বস্তা ডাম্পিংয়ের দায়িত্ব পায় আইয়ুব। সেসময় ১০ হাজার বস্তা কাজে লাগিয়ে বাকি দুই হাজার বস্তা সে কয়রার পরিচিত এক শ্রমিক সর্দারকে সরবরাহ করে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন আইয়ুব আলীর এতসব দুর্নীতি ও অনিয়মসহ চুরির ঘটনা তদারকির দায়িত্বে থাকা কতৃপক্ষ বেশ ভালভাবে জ্ঞাত। তবে আইয়ুব আলীর নিকট থেকে নানা সুযোগ সুবিধা পাওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে শ্যামনগরের পাঁচ ও ১৫ নম্বর পোল্ডারের যেকোন প্রকল্পে আইয়ুব আলীকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। আইয়ুব আলীর দলে কর্মরত এক শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায় নুতন একটি পকল্পের কাজ নিতে আইয়ুব সম্প্রতি দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে কতৃপক্ষকে ‘ম্যানেজ’ করতে গত ১৮ আগস্ট সে তিনটি ককসিট ভরা মাছ নিয়ে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার বাসায় যায়।
তবে আইয়ুব আলী যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পুরানো বস্তার বালু নুতন বস্তার নেয়ার কাজ করছিল তার শ্রমিকরা। পরে সে কাজ বন্ধ করা হয় উল্লখ করে তিনি আরও বলেন কাজ পাওয়ার জন্য উর্ধ্বতনদের সাথে তো যোগাযোগ রাখা দোষের কিছু না।
গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদল আলম জানান উপকূল রক্ষা বাঁধ স্থানীয় গনগনের কাছে রীতিমত আতঙ্কে পরিনত হয়েছে। এমন গুরুত্বপুর্ন কাজে পুকুর চুরির মত ঘটনা ঘটলে তা উপকুলবাসীর দুর্দশাকে বৃদ্ধি করবে। তুলনামুলক সৎ ব্যক্তিদের পাউবো’র প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে লাগানো উচিত বলে মন্তব্য করেছেন জলবায়ু আন্দোলনের কর্মী জান্নাতুল নাইম। তিনি জানান বাঁধ উপকুলবাসীর জীবন-জীবিকার সাথে মিশে গেছে। তাই কোন অসৎ ব্যক্তিকে উপকূল রক্ষা বাঁধের কাজে লাগালে বিপদ এড়ানো যাবে না।