ভাগ্য বদলাতে অনেকে দেশ-বিদেশি মানব পাঁচারকারীদের প্রলোভনের শিকার হচ্ছেন। অর্থাৎ বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে, একটু উন্নত জীবনের আশায় মানুষ দেশান্তরি হয়। বৈধ পথে সুযোগ না পেলে অবৈধ পথে পা বাড়ায়। আর অসহায় মানুষের সেই আকাক্সক্ষার সুযোগ নেয় প্রতারক ও দুর্বৃত্ত শ্রেণির কিছু মানুষ। চাকরির ভিসায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে মানব পাঁচারকারী চক্রের বাংলাদেশি সদস্যরা। ভুয়া ভিসায় প্রথমে ভারত, পরে শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে আটকে রেখে নির্যাতন এবং মুক্তিপণ আদায় করে চক্রটি। এরপর তাদের বিভিন্ন জঙ্গলে ফেলে রাখা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সংঘবদ্ধ চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের দালাল চক্রের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। মিথ্যা আশ্বাস, প্রলোভন, বৈধভাবে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে অবৈধভাবে পাঠানোর ঘটনা ঘটছে। মিথ্যা বিজ্ঞাপন প্রচারের দ্বারা অসংখ্য মানুষ যে শুধু সর্বস্বান্ত হচ্ছে তা-ই নয়, অনেক ক্ষেত্রেই মানুষকে বিপদে পড়তে হচ্ছে। বাংলাদেশ মানবপাঁচারের বড় উৎস হয়ে উঠুক-এটা আমাদের কাম্য নয়। ফলে দেশের আনাচকানাচে ছড়িয়ে থাকা পাঁচারকারীদের সব নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোর তৎপরতা আরো বাড়াতে হবে। আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে তরুণদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে এবং বৈধপথে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ সম্প্রসারিত করতে হবে। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার মতে, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর প্রায় সাত লাখ মানুষ অবৈধভাবে বিদেশে পাড়ি জমান, যাদের একটি বড় অংশ যায় পাঁচার হয়ে। দেশের দক্ষ ও আধাদক্ষ শ্রমিকরা এখনো ঋণ বা জমিজিরাত বিক্রি বা বন্ধক রেখে অনিশ্চয়তা আছে জেনেও আদম পাঁচারকারীদের শরণাপন্ন হন। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মতে, পাঁচারকারীরা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যের সহায়তা পেয়ে থাকে। অন্যদিকে মানব পাঁচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নজিরও খুবই কম। অনেকে ধরা পড়েন না, যারা ধরা পড়েন, তারাও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসেন। তাই বাংলাদেশ থেকে মানব পাঁচারের এ ভয়ংকর প্রবণতা বন্ধ করতে হলে রাষ্ট্রকে আরও কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের ভেতরেই কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে, পাঁচারকারীদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করা ও যারা মানব পাঁচারে সহায়তা করবেন, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। এর জন্য মানব পাঁচারের বিচারহীনতা রোধে হাইকোর্টের নিবিড় তদারকি প্রয়োজন। তাহলেই মানবপাঁচার রোধ করা সম্ভব হবে।