ভুল নীতি ও দুর্বল বাজার তদারকির কারণে সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। যেখানে দেশে নিত্যপণ্যের উৎপাদনে কোনো ঘাটতি নেই। সরবরাহব্যবস্থাও স্বাভাবিক। এরপরও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে পাগলা ঘোড়ার গতিতে। এতে ভোক্তার জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে লাগামহীনভাবে। দীর্ঘ সময় ধরে চলমান অর্থনৈতিক মন্দায় মানুষের আয় কমে যাচ্ছে। ফলে জীবনযাত্রার খরচ যেভাবে বেড়েছে, সেভাবে আয় বাড়েনি। এতে সংসার চালাতে মানুষ ঋণগ্রস্ত হচ্ছে। ভোক্তার পিঠ ঠেকে গেছে দেওয়ালে। সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে একটি চক্র। তারা প্রতিবছর ভোক্তাকে জিম্মি করে হাজার কোটি টাকা ছিনিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু ওই চক্রের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। এভাবেই নির্বিঘ্নে দাপুটে উত্থান ঘটছে বাজার সিন্ডিকেটের। সরকারি দু-একটি সংস্থা কোনো কোনো ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে নামমাত্র জরিমানা করছে। এতে জরিমানার অর্থ তুলতে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম আরও বাড়িয়ে দিচ্ছেন। বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে সিন্ডিকেটর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে জোর দাবি উঠেছে। কিন্তু সরকারের একাধিক মন্ত্রী রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। ২০২০ সালে করোনার সময় সরবরাহ সংকট দেখিয়ে পণ্যের দাম একদফা বাড়ানো হয়েছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারির শেষদিকে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম অস্বাভাবিক গতিতে বাড়ে। এতে সরবরাহ সংকট দেখা দেয়। আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়ে সৃষ্টি হয় ডলার সংকট। বেড়ে যায় ডলারের দাম। এর প্রভাবে বাড়তে থাকে পণ্যের দামও। যতটুকু না আন্তর্জাতিক বাজার বা ডলারের দামের প্রভাব পড়েছে, এর চেয়ে বেশি বেড়েছে সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে। বর্তমানে ৮০ টাকার নিচে সবজি মিলছে না বললেই চলে। চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, আটা-ময়দা, পেঁয়াজ-রসুন, মাছ-মাংসসহ সব পণ্যের ক্ষেত্রেই একই অবস্থা।রাষ্ট্রযন্ত্রের নজরদারিকে তোয়াক্কা না করেই কথিত সিন্ডিকেট পণ্যের দাম বাড়িয়েই যাচ্ছে। বর্তমানে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে-ভোক্তা বাজারে পণ্যে হাত দিতে সাহস পাঁচ্ছেন না। দাম শুনে হা করে তাকিয়ে থাকছেন। সামর্থ্য না থাকায় কিনতেও পারছেন না। এ সিন্ডিকেট আমাদের ভাঙতে হবে। তাই নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করায় অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি। যাতে পণ্যমূল্য নিয়ে কারসাজি করা অসাধুদের ধরে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়। এ ছাড়া পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা, সিটি করপোরেশন, মাঠ প্রশাসন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।