উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে কুড়িগ্রামে নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। তিস্তা নদীর পানি শুক্রবার সকাল থেকে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। শনিবার বিকেলে তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া রেল ব্রীজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
বৃষ্টি ও বন্যার ফলে কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নে প্রায় ৫০টি বাড়ী নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধির ফলে এই উপজেলার দুটি ইউনিয়নের প্রায় ৫ শতাধিক বাড়ীঘরে পানি উঠেছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে স্থানীয় রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও রান্নাবান্না, খাওয়া-দাওয়া সমস্যা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির কারণে গরু, ছাগল ও হাসঁমুরগীর খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।
এদিকে বন্যায় ৭০৫ হেক্টর আমন ধান, ৮ হেক্টর বীজতলা ও ১১০ হেক্টর সবজিক্ষেত বন্যায় নিমজ্জিত হয়েছে বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের মেম্বার মিনহাজুল জানান, আমার ইউনিয়নের সরিষা বাড়ী এলাকায় বাড়ি বাড়ি পানি উঠেছে। এখানে প্রায় ২ শতাধিক বাড়ীঘর তলিয়ে গেছে।
কিসামত নাকেন্দা এলাকার ভুন্দুর বাজার ও জোলাপাড়ার মৃত: হেলাল উদ্দিনের ছেলে আবুল কাশেম (৫০) জানান, এই গ্রামের ৭৫টি বাড়ীর মধ্যে ৪৫টি বাড়ীতে পানি উঠেছে। এখানকার আবেদ, মোহাম্মদ আলী নজরুল, রফিকুল, আব্দুল, সাহাদত, শাহালম, আবুল, মজিবর, মুসলিম, জয়নাল, কুদ্দুস, ফারুক, আউয়াল, কালাম, আতাউর, ইসাব আলী, সাহেব আলী, লিটনসহ অনেকের বাড়ীঘরে পানি।
এই গ্রামের জয়নালের স্ত্রী মাহমুদা (৪৫) জানান, আমার ছোট পুকুরে ৪/৫ হাজার টাকায় প্রায় ১৮ কেজি মাছের পোনা ছেড়েছিলাম, সব মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।
বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের খিতাব খাঁ এলাকার মেম্বার মামুনুর রশীদ জানান, আমার এলাকায় খিতাবখা বড়দরগা গ্রামের নুর ইসলামের বাড়ী থেকে বুড়িরহাট বাজার পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় ভাঙনে প্রায় ৫০টি বাড়ীঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙন হুমকীর মুখে রয়েছে খিতাবখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যারয়ের দ্বিতল ভবন, চর খিতাব খা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বুড়িরহাট বাজার। খিতাব খাঁতে গত এক সপ্তাহে ছামসুল, নায়েব আলী, জিয়াউল, রোস্তম, হানিফ, মাহবুল, আদর উদ্দিন, অফিকুল, ছামাদ আমিনুল, অতুল, নুর ইসলাম, নুরুল, নুর মোহাম্মদ, খয়ের উদ্দিন, আবদুল করিম, রশীদ, রেজাউলসহ প্রায় অর্ধ শতাধিক বাড়ীঘর নদীগর্ভে চলে গেছে।
ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করতে এসে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুরে তাসনিম জানান, আমার কাছে ২০জন নদী ভাঙন কবলিত পরিবারের তথ্য এসেছে। তাৎক্ষণিকভাবে এখানে ৫০টি দুস্থ পরিবারে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ভাঙন ও বন্যা কবলিতদের জন্য দেড়টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিনহাজুল ইসলাম জানান, দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং একটি বাজার যাতে ভাঙনের কবলে না পরে সে ব্যাপারে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। এছাড়াও ভাঙন ও বন্যা কবলিতদের সহযোগিতার জন্য পর্যন্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে বিষয়গুলো তদারকী করছি।