সুন্দরবনে বাঘ হত্যা করে বিদেশে পাঁচার করা হচ্ছে। দিন দিন বিশ্বব্যাপী কমছে বাঘের সংখ্যা। অন্যদিকে বাঘ হত্যা ও পাঁচারের সংখ্যা-দুটোই বাড়ছে। সুন্দরবনের মোট আয়তন ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার। এরমধ্যে বাংলাদেশ অংশে সুন্দরবন রয়েছে ৬হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। পরিসংখ্যান অনুসারে এখানে বাঘের সংখ্যা ৫’শটি। বাংলাদেশের অনেক এলাকায় বাঘের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যবহারের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। ধনী বাংলাদেশি নাগরিকেরা ঔষধি কাজে, আধ্যাত্মিক উপাদান হিসেবে এবং ঘর সাজানোর শৌখিন পণ্য হিসেবে বাঘের শরীরের অংশবিশেষ যেমন হাড়, কাটা দাঁত, মাংস, দুধ, মাথার খুলি, চামড়া ইত্যাদি ব্যবহার করেন। অনেক ক্ষেত্রে দৈহিক শক্তি বাড়াতে অনেকে বাঘের মাংস পর্যন্ত খান। বাঘের দাঁত ও নখ শক্তির প্রতীক হিসেবে এবং খারাপ আত্মাকে তাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। তবে টাকার লোভে একাধিক চক্র বাঘ হত্যা করে বিদেশে পাঁচার করছে। হারবাল ওষুধ তৈরিতে বিদেশে বাঘের শরীরের বিভিন্ন অংশ ব্যবহৃত হচ্ছে বলে জানিয়েছে র্যাব। হত্যা করা বাঘের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এবং জীবিত বাঘের বাচ্চা বিদেশে পাঁচারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে একাধিক চোরাশিকারী চক্র কাজ করে যাচ্ছে। এক গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে বাঘ চোরাচালানের সিংহভাগই ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে স্থলসীমান্ত দিয়ে হয়। আঞ্চলিক রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং দেশগুলোর মধ্যে সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত মিল বাঘ চোরাচালানে অন্যতম সহায়ক হিসেবে কাজ করে। জরিপের সময় বাঘের অংশ পাঁচারকারী চক্রগুলো মাদক পাঁচারের সঙ্গে যুক্ত বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯০০ সালে বিশ্বজুড়ে বাঘের সংখ্যা ছিল এক লাখের বেশি। কিন্তু ২০১০ সালে এ সংখ্যা কমতে কমতে এসে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২০০-তে। এরপর আবার বাঘের সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও হত্যা ও পাঁচারের হার বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩ হাজার ৯০০ বাঘ আছে বলে ট্রাফিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। নতুন এক জরিপে দেখা গেছে, একবিংশ শতাব্দীতে ২ হাজার ৩০০টির বেশি বাঘ হত্যা কিংবা পাঁচার করা হয়েছে। ২০০০ সাল থেকে ২০১৯-এই ১৯ বছরে বিপুলসংখ্যক বাঘকে হত্যা কিংবা অবৈধভাবে পাঁচার করা হয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বাঘ নিধন বন্ধ করা জরুরি। বিশ্বের বাঘের অবৈধ চোরাচালান বন্ধে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ, এই অবৈধ তৎপরতার মোট ১২টি ক্ষেত্র গবেষণায় চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ এ ব্যাপারে তৎপর হলে বাঘ হত্যার তৎপরতা বন্ধ করতে করা যাবে। বাংলাদেশ সুন্দরবনে জলদস্যু নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি বিকল্প জীবিকায় সাফল্য পেয়েছে। একটি সফল উদাহরণ বাঘ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সুতরাং বাঘের এসব চোরাচালান চক্রকে এখন কঠোরভাবে দমন করতে হবে। তাহলে দেশের জাতীয় সম্পদ রক্ষা করা যাবে।