দেশের বাজারে দীর্ঘদিন ধরে অস্থিরতা চলছে। প্রায় সবধরণের পণ্যের দামই বেশি। আর কোনো পণ্যের চাহিদা বেড়ে গেলে তো কথাই নেই। পণ্যের চাহিদা বাড়লে সাথে সাথে অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে তার দাম বাড়িয়ে দেয়। ফল বিক্রেতারাও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। অসাধু ফল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর জোরালো অভিযান লক্ষ করা যায় না। বস্তুত এ কারণেই ফল বিক্রেতারা যখন-তখন এ অপতৎপরতায় লিপ্ত হন। রাজধানীর বহু খুচরা ফল বিক্রেতা পাইকারি আড়ত থেকে কম দামে ফল ক্রয় করে কারসাজি করে খুচরা পর্যায়ে প্রায় দুই থেকে তিনগুণ বেশি দামে তা বিক্রি করছে। ফলে পরিবারের জন্য যারা নিয়মিত ফল কিনতেন, তারা বাজারের তালিকা থেকে পুষ্টিকর এ পণ্যটি বাদ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। জরুরি প্রয়োজনে খরচ সমন্বয় করতে অনেকে একটি-দুটি করে ফল কিনছেন এখন। দেশে ডলার সংকট হওয়ায় গত বছরের মে মাসে ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পরে ফল আমদানিতে ঋণ সুবিধাও বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব কারণে বিদেশি ফলের আমদানি অন্য বছরের তুলনায় কমেছে প্রায় ২৮ শতাংশ। আমদানি কমায় দামও বেড়েছে। এই অজুহাত দেখিয়ে অসাধু খুচরা ব্যবসায়ীরা সব ধরনের ফলের দাম পাইকারির তুলনায় দুই থেকে তিনগুণ বাড়িয়ে বিক্রি করছে। ফলে স্বল্পণ্ডআয়ের মানুষ আঙুর, আপেল, মাল্টা, আনার এসব ফল ক্রয় করার কথা এখন কল্পনাও করতে পারেন না। দাম কিছুটা কম হওয়ায় সাধারণ মানুষ পেয়ারা, আমড়া, আনারস-এসব দেশি ফল ক্রয় করে থাকেন। এখন ঘরে ঘরে ডেঙ্গু রোগী। চিকিৎসকরা রোগীদের প্রচুর তরলজাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। এ কারণে ডাবের চাহিদা বেড়েছে। এ সুযোগে খুচরা বিক্রেতারা ডাবের দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতি পিস ডাব আড়তে ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হলেও রাজধানীর খুচরা বাজারে কিংবা এলাকার গলিতে ১৫০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমরা মনে করি, অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধে অবিলম্বে এদিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। সেই সঙ্গে দেশে বিদেশি ফল উৎপাদনে জোর দিতে হবে। আমাদের দেশের মাটি ও আবহাওয়া যে অনেক বিদেশি ফল চাষের উপযোগী, এটা প্রমাণিত। দেশে বিদেশি ফল উৎপাদন বাড়ানো গেলে আমদানিনির্ভরতা কমে আসবে। কাজেই ভবিষ্যতে আমদানি এড়াতে বিদেশি ফল চাষে আগ্রহী চাষিদের প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। আমরা চাই, ফলের বাজারে অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই ফল সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আনতে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।