ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিদায়ী সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ছবি নামিয়ে ফেলার অভিযোগ তুলে মনিরুজ্জামান খান বাচ্চু নামের এক আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যবসায়ীকে আটক করে মারধর এবং গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে।
জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরামদ্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য নাজমুল হাসান ওরফে মঈন জমাদ্দারের নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হেনস্তার শিকার মনিরুজ্জামান খান বাচ্চু চরামদ্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল নগরীর ১১নম্বর ওয়ার্ডস্থ বান্দ রোডের সোনার বাংলা মটরসের স্বত্বাধিকারী।
অপরদিকে আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুজ্জামান খান বাচ্চুকে জিম্মি করে মারধরসহ হেনস্তার প্রতিবাদে সোমবার সকালে চরামদ্দি ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনতার ব্যানারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাশাপাশি মারধর ও জুতার মালা পরানোর অভিযোগে মনিরুজ্জামান খান বাচ্চু বাদি হয়ে অভিযুক্ত নাজমুল হাসান ওরফে মঈন জমাদ্দার ও মো. সোহাগের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জনকে আসামি করে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। সোমবার দুপুরে মামলা দায়েরের সত্যতা স্বীকার করে কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই আরাফাত হাসান বলেন, মামলার অভিযোগগুলো তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে ব্যবসায়ীর গলায় জুতার মালা পরানোর দুটি ভিডিও ইতোমধ্যে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এরমধ্যে একটি ভিডিও এক মিনিট দুই সেকেন্ডের, অপরটি ১৭ সেকেন্ডের। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে বলতে শোনা গেছে, সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ছবি নামিয়ে রাখার শাস্তি স্বরূপ গলায় জুতার মালা পরানো হয়েছে। একটি ভিডিওতে ওই ব্যবসায়ীকে বাধ্য করা হয়েছে সাদিক আব্দুল্লাহর ছবি দোকান থেকে নামিয়ে রাখা অন্যায় হয়েছে বলতে। অপরটিতে শোনা গেছে, সাদিক আব্দুল্লাহ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছেলে এটাই তার বড় পরিচয়। তার ছবি নামানোর শাস্তি স্বরূপ শিক্ষা দেওয়ার কথা।
মারধরের শিকার আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুজ্জামান খান বাচ্চু বলেন, বরিশাল নগরীর ১১নম্বর ওয়ার্ডস্থ বান্দ রোডে সোনার বাংলা মটরস নামে আমার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার পূর্ব পরিচিত নাজমুল হাসান মঈন জমাদ্দার গত ২২ আগস্ট মোবাইল ফোনে আমাকে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৌহিদুর রহমান ছাবিদের ক্লাব হিসেবে পরিচিত শহীদ রহিম স্মৃতি পাঠাগার ক্লাবের পশ্চিম পাশের কক্ষে ডেকে নেন। বিকেল তিনটার দিকে সেখানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রুম আটকে ওখানে থাকা সাব্বির, আব্দুল, কাওছার, সোহাগ আমাকে মারধর শুরু করে। এরমধ্যে একজন বিএনপির সমর্থক ও বাকি চারজন সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী। আমাকে রুমের মধ্যে আটকে ৮/৯ দফায় মারধর করা হয়। মারধর করে তারা আমাকে বলতে বলে যে, আমার ব্যক্তিগত অফিস থেকে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর ছবি নামিয়েছি। ওরা যতোবার এই কথা বলতে বলেছে, ততোবার আমি বলেছি, সাদিক আব্দুল্লাহর ছবি আমার অফিস থেকে আমি নামাইনি। এতে তারা আমার ওপর মারধরের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। পরে বাধ্য হয়ে ওদের শেখানো কথা বলতে বাধ্য হয়েছি।
মনিরুজ্জামান খান বাচ্চু আরও বলেন, আমি বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরামদ্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী। তাই আমাকে হেনস্তা করার জন্য কাওছার জুতার মালা বানিয়ে দেয় আর সোহাগ আমার গলায় পরিয়ে দেয়। আমি দুই-তিনবার জুতার মালা ফেলে দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা আমাকে মারধর করে। শেষে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললে গলায় জুতার মালা পরিয়ে আমাকে চেয়ারে বসিয়ে ভিডিও ধারণ করে।
মনিরুজ্জামান খান বাচ্চু অভিযোগ করে বলেন, সদ্য সিটি নির্বাচনের সময় মঈন জমাদ্দার কয়েক দফায় আমাকে হুমকি দিয়ে বলেছে আমি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর পক্ষে কাজ করলে বরিশালে থাকতে দেবেনা। তার হুমকিতে না পরে আমি নৌকার পক্ষে কাজ করার কারণেই মূলত আজ তারা আমাকে মারধর করে গলায় জুতার মালা পরিয়ে তা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে।
অভিযুক্ত নাজমুল হাসান মঈন জমাদ্দার বলেন, মনিরুজ্জামান খান বাচ্চুর যে ভিডিও ছড়িয়েছে তা আমি ধারণ করেছি ও ছড়িয়েছি এটা সত্য। তিনি আরও বলেন, সাদিক আব্দুল্লাহর নাম বলাটা আমার উচিত হয়নি। এটা আমি ভুল করেছি। এজন্য সাদিক ভাইও (সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ) আমার ওপর খুব ক্ষিপ্ত হয়েছেন।