উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ীঢলে বন্যার পানি বৃদ্ধি পাঁচ্ছে। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে শুরু হয়েছে রাক্ষুসী যমুনার ব্যাপক ভাঙন। গত ৩১ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) স্বরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখাগেছে জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার যমুনা নদীর বড়খাল, মাঝিপাড়া ও বওলাতলী খানপাড়ায় ব্যাপক ভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে। এক দিনে যমুনার গর্ভে বিলীন হয়েছে অন্তত দশটি পরিবারের বসতভিটা। ভাঙন কবলীত এলাকায় জামালপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডাম্পিং করা বালিভর্তি জিও ব্যাগ পানির তীব্র স্রোতে বিলিন হতে চলেছে। এতে করে ভিটামাটি হারানোর শঙ্কা আবারও নতুন করে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে বড়খাল এলাকাবাসীর।
জামালপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানাযায়,যমুনার বামতীর দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বড়খাল গ্রামে গত ২০২১ সালে ১০০ মিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন শুরু হলে পাউবো বালিভর্তি জিওব্যাগ নদীতে ডাম্পিং করে। এ এ সময় পাউবো ১৫০ মিটারবালিভর্তি জিওব্যাগ ডাম্পিংকরে ভাঙ্গন রোধ করেন। চলতি মৌসুমে বৃহম্পতিবার সেই ডাম্পিং খরস্রােতা যমুনার স্রােতের আবারও ডাম্পিং নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ফলে বড়খাল,মাঝিপাড়া ও বওলাতলী খানপাড়ায় অব্যাহত ভাঙ্গন দেখা দেয়। ভাঙঙ্গনের তীব্রতা এতই বেশী যে একইদিনে অন্তত ১০টি পরিবারের বসত ভিটা যমুনার ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে কোটি টাকা ব্যয়ে নব নির্মিত তিন তলা বিশিষ্ট ঐতিহ্যবাহী বড়খাল উচ্চ বিদ্যালয়, হলকারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশক’টি মসজিদ/মাদ্রসা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,শতশত পরিবারের বসত ভিটা, আবাদি জমি। এলাকাবাসীর দাবী দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অল্প সময়ের মধ্যে যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ভুক্তভোগিরা।
বশত ভিটা ভাঙনের শিকার হোসেন আলী খটটু বলেন, একসময় আবাদি জমি বসতভিটা সবই ছিল আমার। সর্বনাশা যমুনা নদী সব কিছুই গ্রাস করে সর্বশান্ত করে ফেলেছে। যতকুটু সর্বশেষ ছিল মাথাগুজার ঠাঁই,তাও রাক্ষসী যমুনা বিলীন হয়ে গেল। এখন আমি পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় গিয়ে আশ্রয় নিব।
বড়খাল গ্রামের তোতা মিয়া জানান, দীর্ঘ দিন থেকে এ এলাকা যমুনার ভাঙনে জর্জরিত। পানি উন্নয়ন বোর্ড তড়িঘড়ি করে জিও ব্যাগ ফেলে সাময়িক ভাবে ভাঙন রোধের ব্যবস্থা নিয়ে ছিল,কিন্তুু তাদেও সে চেষ্টাও বিফলে গেল।
মাঝিপাড়া গ্রামের বাদল চন্দ্র দাস বলেন, বিগত দিনে যমুনার গর্ভে শতশত মানুষের বসত ভিটা বিলীন হয়েছে। যতটুকু ছিল তা’ এ বৎসর আবারও ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এভাবে অব্যাহত ভাঙ্গন চলতে থাকলে অফল্প দিনের মধ্যে বড়খাল, মাঝিপাড়া ও বওলাতলীখানপাড়াসহ চরডাকাতিয়া ও খোলাবাড়ী এলাকা যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তাই এলাকাবাসীর দিন কাটছে ভাঙন আতঙ্কে।
এ বিষয়ে চিকাজানী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আশরাফুল ইসলাম আক্কাস বলেন, অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙ্গন রোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে বিশাল এলাকা যমুনার গর্ভে বিলিন হবে।তাই দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান।
এ বিষয়ে জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো) এর নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, যমুনার ভাঙন রোধের স্থায়ীব্যবস্থার গ্রহণের জন্যে সমীক্ষা চলমান রয়েছে। সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী ভাঙন রোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।