শিক্ষা খাতে সরকারের উদ্যোগের শেষ নেই। প্রাথমিকে শিশুদের ঝরে পড়ার হার ক্রমেই কমছে, এবং দেশে স্বাক্ষরতার হার শতভাগে কমাতে শিশুদের বিনামূল্যে বই বিতরণ, ছাত্রীদের পর ছাত্রদেরকেও উপবৃত্তি প্রদান,স্কুলে বাড়তি বিনোদনের ব্যবস্থাসহ বেশকিছু কার্যক্রম চালু রেখেছেন সরকার। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার ৮৮.৬০ শতাংশ। তবে এ হার আরও বাড়াতে কার্যক্রম চলছে। এ কার্যক্রমে ১০ লাখ শিশু-কিশোর বিদ্যালয়বহির্ভূত রয়েছে। ইতোমধ্যে এই কার্যক্রমে এক লাখ শিশু-কিশোরকে মৌলিক শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। বাকি ৯ লাখ শিশু-কিশোরকে এই কার্যক্রমের আওতায় আনার কাজ চলছে। তবে পার্বত্য অঞ্চলের শিশুদের প্রতি সরকারের বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। পার্বত্য অঞ্চলে কাছাকাছি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় অনেক দূরে। ফলে এখানে শিশুরা প্রাথমিক পার হলেও মাধ্যমিক থেকে ওপরের দিকে পড়ার সুযোগ পায় কম। এ কারণে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী প্রাথমিকের পরই ঝরে যায়। তাদের শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে যায় প্রাথমিকেই। এই সংখ্যা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। কাছাকাছি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকা, দারিদ্র্য, আয়রোজগারের চাপ এবং সচেতনতার অভাবে পঞ্চম শ্রেণি পার হতে না হতেই শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে। পার্বত্য এলাকা বাদে সারা দেশে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরে যেতে যেতে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার গড় হার প্রায় ২০ শতাংশ। আবার ষষ্ঠ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার মধ্যবর্তী সময়েও হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের শিশুরা। মাধ্যমিক স্তরে ভর্তির পর এসএসসি পর্যন্ত প্রায় ৩০ শতাংশ ঝরে পড়ে। এ হারও সমতলের চেয়ে অনেক বেশি। অনেকে রোজগারে নেমে পড়ে। অনেক মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় স্কুলে পড়তে পড়তেই। এ কারণে পঞ্চম শ্রেণির পর অনেকের পক্ষেই স্কুলে থাকা সম্ভব হয় না। এর জন্য দারিদ্র্যতাই বড় দায়ী। আবার অনেকেই দূরদূরান্ত থেকে এসে মাধ্যমিকে পড়তে চায় না। উপবৃত্তি দিয়েও তাদের স্কুলমুখী করা যায় না। এ ছাড়া শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার পেছনে বাল্যবিবাহ ও জুমচাষে যুক্ত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি কারণও রয়েছে। তাই ‘ঝরেপড়া ঠেকাতে সামাজিক নিরাপত্তা বাড়াতে হবে, অভিভাবক ও স্কুল শিক্ষকদের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে এবং ঐ অঞ্চলগুলোতে এলাকাভিত্তিক ঝরে পড়ার কারণ খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া।’ পার্বত্য অঞ্চলে কাছাকাছি মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্মান করাও অত্যন্ত প্রয়োজন।