রংপুরে সুপারির ফলন বেড়েছে। এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া সুপারি চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছর রংপুর জেলায় মোট ২৫৬ হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ১৫৯০ মেট্রিক টন সুপারি। ২০২১ সালে ১৪০০ মেট্রিক টন সুপারি উৎপাদন হয়েছিল।সুপারি সাধারণত পানের সঙ্গে খাওয়া হয়। সারা দেশেই এটি পাওয়া যায়। শহর ও গঞ্জের মোড়ে মোড়ে পান-সুপারির দোকান গড়ে উঠেছে। এছাড়াও রংপুরের পৌর বাজার, লালবাগ বাজারসহ রংপুরের প্রতিটি উপজেলা শহরে সুপারির বাজার গড়ে উঠেছে।বিয়ে বাড়ি, ভূরিভোজ ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান ছাড়াও গ্রামের মানুষের নিত্যদিনের খাবার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে পান-সুপারি। তাছাড়া অতিথি আপ্যায়নের পর পান-সুপারি দেওয়া একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে এই এলাকায়। পান-সুপারি নিয়ে অনেক বুলি ও গান রয়েছে।কৃষকরা জানান, চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ এই তিন মাসে গাছে সুপারি পাকতে শুরু করে। অপরদিকে সুপারি গাছে নতুন করে ফুল ও ফল আসা শুরু হয়। বসতবাড়ির আশপাশে এবং উঁচু জমিতে চারা লাগানোর আড়াই থেকে তিন বছরের মধ্যেই ফল দিতে শুরুকরে সুপারির গাছ। বছরে এক-দুবার গোবর সার আর পানির সেচ দেওয়া ছাড়া আর তেমন কোনো বাড়তি পরিচর্যা করা লাগে না।ব্যবসায়ীরা কেউ কেউ বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে সুপারি কিনে তা মাটিতে খাল করে পুতে রাখেন বা পানিতে ভিজিয়ে রাখেন। পরে পানিতে পচানো ওই সুপারি শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে বিক্রি করেন প্রয় দেড়গুণ দামে।রংপুরের গ্রাম-গঞ্জে কম বেশি প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই সুপারির গাছ দেখা যায়। বাড়ির আঙিনা, ঝোপ-ঝাড়, পুকুর পাড়, রাস্তর ধার সব জায়গায় এ গাছ লাগানো যায়। একবার লাগালে দীর্ঘদিন পর্যন্তএ গাছ ফল দিয়ে থাকে। এই গাছের তেমন কোনো যতœ নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। এ গাছে ডালপালা থাকে না। সোজা লম্বা হয়ে থাকে।রংপুর জেলার রংপুর সদর, পীরগাছা, পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ এলাকায় প্রচুর সুপারি চাষ হয়।রংপুর জেলার সিগারেট কোম্পানি এলাকার বাসিন্দা তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাড়িতে ৫০টির মতো সুপারি গাছ আছে। এগুলো বাড়ির আশপাশে লাগিয়েছি। প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে সুপারি পাওয়া যায়। অল্প পরিমাণে আমরা খাই ও আত্মীয় বাসায় আসলে তাদের খেতে দেই। আর বাকিগুলো বিক্রি করে দেই। সুপারি থেকেও বাড়তি আয় হচ্ছে।রংপুর জেলার পীরগাছা এলাকার চাষি আবদুল হাকিম বলেন, সুপারি গাছ একবার লাগালে ১০১৫ বছর ফল পাওয়া যায়। চাহিদা ভালো থাকায় সুপারি অধিক লাভে বিক্রি হয়। ছায়াযুক্ত জায়গাতেও সুপারি গাছ বড় হয়। আমি পুকুর পাড় ও অল্প একটু জায়গায় সুপারি গাছ লাগিয়েছি। তা থেকে বছরে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় হয়।রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, রংপুরের আবহাওয়া ও মাটি সুপারি চাষের জন্য উপযোগী। এছাড়াও সুপারি চাষাবাদে অনেক শিক্ষিত মানুষও এগিয়ে আসছে এবং যথা সময়ে গাছের পরিচর্যা করছে। এতেও উৎপাদন বাড়ছে।