রংপুরের পীরগঞ্জে ৩ কিলোমিটার সড়কের ধার ঘেষে বাড়িঘর নির্মান করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন শতাধিক অসহায় ভূমিহীন পরিবার। জানা যায়,উপজেলা সদরের পৌরসভা সীমানায় বালুয়া ক্লিনিক থেকে চতরা ইউনিয়নের হরিণ শিং দীঘির পাড় পর্যন্ত ৩ টি ইউনিয়নের শতাধিক ভুমিহীন পরিবার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর আওতাভুক্ত সড়কের ধারে টিনের বেড়া দিয়ে ঘর বানিয়ে বসবাস করছেন। নিজেদের জায়গাজমি না থাকায় এভাবেই ঘর তৈরী করে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন অসহায় ওই মানুষগুলো। পাকাসড়কের উপর এভাবে বসবাস যেমন তাদের জন্য ঝুকিপূর্ণ, তেমনি সড়কের ধারে দখল ও ঘর নির্মান ও বসবাসে সার্বক্ষনিক দুর্ঘটনার আশংকাও রয়েছে। হরিণ শিং এলাকায় বসবাসকারী দুলা মিয়া জানান, আগে তার বাড়ি ছিল কাবিলপুর ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামে। ৪ শতক জমিতে দুই ভাই বোন মিলে অনেক কষ্টে দিন কাটতো। সেখানে স্থান সংকুলান না হওয়ায় জন্মভুমির মায়া ছেড়ে শ্বশুর বাড়ী এলাকায় রাস্তার উপর মাটির ঘর বানিয়ে ঠাঁই করে নিয়েছে। গত ১২ বছর থেকে তিনি ২ টি পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন এখানেই। চতরা এলাকার ধর্মদাস গড়ের বাসিন্দা, আতিয়ার রহমান, ওয়াহেদ আলী, মিজানুর রহমান, সালাম মিয়া, সাহানারা, ফজিলা,মাজেদা বেগম বলেন, তাদের সংসারে লোকসংখ্যা বেশি, জায়গাজমি না থাকায় তারা ৮/১০ বছর আগে এখানে এসে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে বসবাস করছে। একাধিক পরিবারের লোকজন দাবি করছে উপজেলা ও ইউনিয়ন ভুমি অফিসে সরকারি ঘরের জন্য আবেদন করেছে এবং আশায় রয়েছে তারা কবে সরকারি ঘর পাবে ? স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, রাস্তার পাশে যারা বসবাস করছে তারা সকলেই অসহায়। মোঘল সেনাপতি মীর যুমলা আসাম বিজয়ের প্রাক্কালে ভবিষ্যত পরিকল্পনায় সুদুর প্রসারী চিন্তাচেতনায় ৮০ হাত প্রশস্তের অনেক উঁচু ওই সড়ক নির্মান করেছিলেন। পরবর্তীতে তা এলাকায় গড় হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। বর্তমানে এটির মাঝখান দিয়ে এলজিইডি’র পাকা রাস্তা নির্মান করা হয়েছে। এই রাস্তার দুই পাশেই প্রচুর জায়গা পরিত্যক্ত রয়েছে। যার পুরোটাই খাস। মওকা বুঝে এখানে অসহায় মানুষগুলো নিজেদের জায়গা জমি না থাকায় ঠাই করে নিয়েছে। এছাড়াও চতরা ইউনিয়নের ধর্মদাস পলিপাড়া থেকে কাঙ্গুর পাড়া পর্যন্ত সরকারি গড়ের উপর শতাধিক পরিবারের লোকজন ঝুপড়ি ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছে। উপজেলা ভুমিহীন কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, পীরগঞ্জ উপজেলায় তাদের সমিতির প্রায় ৫ হাজার ভুমিহীন পরিবার রয়েছে। ১৫ টি ইউনিয়নে এসব ভুমিহীন পরিবারের সদস্যগণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বলে তিনি জানান। এ ব্যাপারে রায়পুর ইউপি চেয়ারম্যান দুলাল চৌধুরী জানান, সড়কের উপর ঘর বাড়ি তৈরী করে শতাধিক পরিবার বসবাস করে। এদের মধ্যে অধিকাংশই লোকজন অসহায় ও ভুমিহীন। তাদের পুনর্বাসন করা গেলে প্রশস্থ সড়কটি দখলমুক্ত করা সম্ভব।
চতরা ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক শাহীন বলেন, চতরা ইউনিয়নের ধর্মদাস পলিপাড়া থেকে কাঙ্গুর পাড়া গড়টি মোঘল আমলে নির্মিত। বর্তমানে এটি সম্পুর্ন খাস। তাই এখানে প্রায় শতাধিক পরিবারের লোকজন ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করে। এসব অসহায় পরিবারের লোকজনের জন্য গৃহ নির্মাণ করে দেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে।