পাবনার সাঁথিয়ায় আসাদুল (৮) নামের এক মাদ্রাসা ছাত্রকে হাত পা বেঁধে বেধরক মারধর করে জখমী করার অভিযোগ পাওয়া গেছে উপজেলার গৌরীগ্রাম ইউনিয়নের হাড়িয়াকাহন বাইতুল উলুম নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা ইকবাল হোসাইনের বিরুদ্ধে। আসাদুল ওই মাদ্রাসার হেফজ শিক্ষার্থী এবং হারিয়াকাহন গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে। এ ঘটনায় বুধবার (৬সেপ্টম্বর) সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায় ওই শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন রয়েছে।এ ব্যাপারে থানায় মামলা না করে এলাকায় বসে বিচার করে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ওই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আসাদুলের জন্ডিস হওয়ার কারণে তিন দিন মাদ্রাসায় অনুপস্থিত ছিল। গত রোববার (৩সেপ্টম্বর) রাত ১১টার দিকে তার দুই সহপাঠী সজিব ও সিয়ামকে দিয়ে বাড়ি থেকে ডেকে পাঠায় মাদ্রাসার ওই শিক্ষক। আসাদুল মনে করেছে সিয়াম তার কাছে টাকা পেত সেজন্য এসেছে। পরে আসাদুলের মা শোভা খাতুন পাওনা ১০০ টাকা দিয়ে দেয় সিয়ামকে দেওয়ার জন্য। আসাদুল তার বাড়ির সামনে সিয়ামকে টাকা দেয়ার জন্য যায়, সেখানে হুজুর ইকবাল হোসেনও উপস্থিত ছিল। এ সময় হুজুর আসাদুলকে জিজ্ঞাসা করে এতদিন মাদ্রাসায় অনুপস্থিত কেন? আসাদুল অসুস্থের কথা জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে মাদ্রাসায় নিয়ে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে, মাথা টেবিলের নীচে দিয়ে কোমড়ের নিচে বেত এবং স্টিলের স্কেল দিয়ে বেধরক মারপিট করে জখম করে। একপর্যায়ে আসাদুল নিস্তেজ হয়ে যায়। এ সময় তাকে হাত পা বেঁধে কাঁথা দিয়ে ঢেকে রাখে। পরে আসাদুলের মা খবর পেয়ে দৌড়ে মাদ্রাসায় যান। গিয়ে ছেলেকে খুঁজাখুঁজি করেন। না পেয়ে হুজুরকে জিজ্ঞাসা করেন আমার ছেলে কোথায়? তিনি বলেন ছেলে তো আপনাদের বাড়ি চলে গেছে। পরে তিনি এদিক ওদিক খোঁজাখুজি করে দেখতে পান মাদ্রাসার ভেতরে কাঁথার নীচে শুয়ে ছেলেটা কাতরাচ্ছে। তাকে উদ্ধার করে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই দিন রাত ১টার দিকে সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভর্তি করেন তার পরবিার।
আসাদুলের মা শোভা খাতুন আবেগ আপ্লুত কন্ঠে জানান, আমার ছেলের জন্ডিস ধরা পড়ায় তাকে আমরা মাদ্রাসায় যেতে দেইনি। আমি যদি ওই সময় দ্রুত না যাই তাহল হয়তো আমার ছেলে মারা যেত। কোন মানুষ হয়ে এভাবে কোন শিশু সন্তানকে মারতে পারে? ওই হুজুরের মনে হয় কোন সন্তান নাই! থাকলে এভাবে অমানবিক নির্যাতন করতো না। আসাদুল এর বাবা আনোয়ার হোসেন জানান, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ থানায় অভিযোগ দিতে নিষেধ করেছে।
অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা ইকবাল হোসেন পলাতক এবং মোবাইলফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আশরাফ আলী ঘটনার সত্যতা শিকার করে বলেন, মাদ্রাসার পক্ষ থেকে ওই শিক্ষার্থীর যাবতীয় চিকিৎসার দায়ভার নেওয়া হয়েছে।
সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, শিশুটিকে যেদিন নিয়ে আসে সেদিন তার অবস্থা খুবই নাজুক ছিল। সে প্রচুর ভয় পেয়েছে পরবর্তীতে যেন জটিল কোন সমস্য না হয় সেজন্য তাকে নিবির পর্যবেক্ষনে রাখা হয়েছে। তবে মারপিটের জখম শুকাতে সময় লাগবে।
সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি)রফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীকে মারধরের খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি, পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।