নীলফামারীর সৈয়দপুরে সাম্প্রতিক সময়ে বহুল আলোচিত ইস্যু রেলওয়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা এবং বিপক্ষে অবস্থানকারী কিছু অবৈধ সুবিধাভোগীদের কথিত আন্দোলনের মহড়া। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢু' মারলেই দেখা যাবে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে সৈয়দপুরের মানুষ সোচ্চার হয়ে উঠেছে। পথে-ঘাটে চায়ের টেবিলে সবখানে আলোচনায় ঝড় তুলছে রেলওয়ের মেডিকেল কলেজ। ফলে এই ইস্যুটি বর্তমানে টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে। আর এটি নস্যাৎ করতে রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী জহিরুল ইসলাম ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। অথচ ওই জহিরুল নিজেই রেলওয়ের কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি দখলে নিয়ে সেখান থেকে প্রতিমাসে লাখ টাকা ভাড়া তুলছেন। বহিরাগত ওই ব্যক্তি কিভাবে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠায় ষড়যন্ত্র করে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তআায়নে বিপক্ষে কাজ করছে তা সৈয়দপুরের মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। তাই এখন সবার মুখেমুখে ফিরছে বিরুদ্ধবাদীদের সমালোচনা। শিক্ষা নগরী হিসেবে পরিচিত সৈয়দপুরের মানুষ কখনও ভাবেনি এখানে একটি মেডিকেল কলেজ হবে। তাদের স্বপ্নের অতীত সেই ভাবনার বাস্তব প্রতিফলন হতে যাচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণায়। ইতোমধ্যে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সৈয়দপুরে বিদ্যমান রেলওয়ে হাসপাতালসহ সংলগ্ন এলাকার ১০ একর জমিতে গড়ে উঠবে মানুষের বহু প্রত্যাশিত রেলওয়ে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। এটি প্রতিষ্ঠিার মাধ্যমে সত্যিকার অর্থে সৈয়দপুর পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা নগরীতে পরিণত হবে। এখানকার পরিচয় পৌঁছে যাবে অনন্য উচ্চতায়। এই হাসপাতাল থেকে শুধু সৈয়দপুর নয়, আশপাশের অন্যান্য উপজেলাসহ সুফল পাবেন অত্রাঞ্চলের অসংখ্য মানুষ। ফলে মেডিকেল কলেজকে ঘিরে আনন্দে উদ্বেলিত হচ্ছে এ অঞ্চলের বিশাল জনগুষ্টি। তারা সবাই অপেক্ষার প্রহর গুনছে কবে আসবে সেই মহেন্দ্রক্ষণ যেদিন মেডিকেল কলেজ নির্মাণের কাজের উদ্বোধন করেবেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। মেডিকেল কলেজের জন্য শহরের মানুষ সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানো অব্যাহত রেখেছেন। তবে প্রস্তাবিত অংশের অবৈধ দখলদার রেলওয়ের কিছু সুবিধাভোগী অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী মানুষকে ভুল বুঝিয়ে এর বিরোধিতা করছেন। যদিও সরকারি তরফে বলা হয়েছে যারা উচ্ছেদের ফলে গৃহহীন হবেন তাদের রেলওয়ের অন্য স্হানে পুনর্বাসিত করা হবে। তারপরও বিরুদ্ধবাদী সুবিধাভোগী ক্ষুদ্র অংশটি আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছেন। মানুষকে বিভ্রান্ত করে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা বাধাগ্রস্ত করছে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন জহুরুল ইসলামসহ আরও ক'জন সুবিধাবোগী অবসরপ্রাপ্ত রেলওয়ে কর্মচারী। স্হানীয় একাধিক সূত্র জানায়, প্রায় ৪২ বছর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় চাকুরী শেষে সম্প্রতি অবসরে গিয়েছেন জহুরুল ইসলাম। চাকুরিতে থাকা অবস্থায় তিনি সাহেব পাড়ায় বাংলো টাইপ একটি কোয়ার্টার বরাদ্দ নিয়েছিলেন। পরে তিনি ওই কোয়ার্টারের সাথের ইউনিটটিও নিজের দখলে নেন। শুধু এটুকু করেই থামেননি জহিরুল ইসলাম। তার অদৃশ্য খুটির জোরে কোয়ার্টারের উভয় পাশের বিশাল অংশ দখল করে স্হাপনা নির্মাণ করে বহিরাগত ব্যক্তি ও একটি কোম্পানীকে ভাড়া দিয়েছেন। গড়েছেন গরুর খামার। অভিযোগ রয়েছে একই এলাকায় অন্য ৫ টি কোয়ার্টার নিজের দখলে রেখে ভাড়া তুলছেন ওই জহির। তার দখলবাজি সৈয়দপুরের রেলেওয়ে অঙ্গণে রুপকথার গল্পকেও হার মানিয়েছে। তার ক'জন সহকর্মী বলেন, সে স্হাপনা থেকে মাসে লক্ষাধিক টাকার ভাড়া তুলে আঙুল ফুলে কলাগাছ নয় বট গাছে পরিণত হয়েছেন। প্রতিবেশীদের মতে সাহেবপাড়ায় রেলওয়ের ভূসম্পত্তিতে গড়ে উঠেছে জহিরের বিশাল সা¤্রাজ্য। আর এই অবৈধ দখল যাতে হাতছাড়া না হয় সে জন্য সে প্রস্তাবিত স্হানে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠায় বিরোধিতা করছেন। আবার একই সাথে যারা তার সাথে একই সুরে কোরাস গাইছেন তারা সবাই অবৈধ পন্হায় দখলে রেখেছেস রেলওয়ে কোয়ার্টার ও বিভিন্ন স্হাপনা। তবে দখলবাজিতে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন জহুরুল ইসলাম। তাই বিরুদ্ধবাদীদের আন্দোলন সংগঠনে তার বিনিয়োগও সবচেয়ে বেশী। তার অবৈধ আয়ের একটি অংশ সে ব্যয় করছে মেডিকেল কলেজ বিরোধী আন্দোলনে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সম্প্রতি অবসরে যাওয়া অপর এক সহকর্মী বলেন, অবসরের পর আমার নামে বরাদ্দ কোয়াটার রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে হস্তান্তর করে ছাড়পত্র নেওয়ার পরেই আমার ফাইনাল সেটেলমেন্ট হয়েছে। একই নিয়ম সব কর্মচারীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কিন্তু কোন যাদু বলে রেলওয়ের এত বিশাল ভূসম্পত্তি দখলে থাকার পরও জহিরকে তার অবসরকালীন সব পাওনা বুঝিয়ে দিল রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তর। এ ক্ষেত্রে কত টাকার বিনিময়ে দফারফা হয়েছে সেটি একটি বড় প্রশ্ন। ওই সহকর্মী আরও বলেন, জহিরের পুরো জীবনটাই দুই নাম্বারিতে ভরা। চাকুরীতে থাকা অবস্হায় নিরীহ রেল শ্রমিকদের ফাঁদে ফেলে চড়া সুদের ব্যবসা ও ফাইনাল সেটেলমেন্টের দালালি করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন রেলওয়ের ক্যারেজ সপের সাবেক মিস্ত্রি মোঃ জহিরুল ইসলাম। তার সম্পদ সৈয়দপুর থেকে বগুড়ার গাবতলী পর্যন্ত বিস্তৃত। জহির তার সব অপকর্ম নির্বিঘœ করতে সবসময় ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেছে ক্ষমতাশালী দলের ট্রেড ইউনিয়ন নেতার পরিচয়। সহকর্মীদের মতে জহির ছিল নামেমাত্র একজন রেলওয়ে কর্মচারী। তার সারা জীবন কেটেছে এক শীর্ষ নেতার পদলেহন করে। চাকুরি থাকা অবস্থায় রেলকে লুটেপুটে খেয়েছে। আবার অবসরের পর রেলওয়ের ভূসম্পত্তি যাতে বংশ পরস্পরায় ভোগ দখল নিশ্চিত থাকে সে জন্যই রেলওয়ে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠায় বিরোধিতা করছেন। তবে জহিরসহ অন্যান্য নেতাদের সম্পর্কে এলাকার একাধিক সূত্র বলছে, বিরোধীতাকারীরা একসময় রেলওয়েতে চাকুরী করলেও বর্তমানে তারা বহিরাগত। ওই ব্যক্তিরা রেলওয়ের কোয়ার্টার ও সম্পদের অবৈধ দখলদার হয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্হান নিবেন এটা মেনে নেওয়া যায়না, মেডিকেল কলেজ না হলেও এসব বিরুদ্ধবাদীদের অবৈধ দখলবাজি যে কোন সময় উচ্ছেদ করতে পারে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সূত্রগুলো বলছে, রেলওয়েতে একটি সাধারণ পদে চাকরি করে জহুরুল ইসলাম কী করে এত বিত্তবৈভবের মালিক হলো সে বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত হওয়া উচিৎ। তাহলেই থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে। ঘুচে যাবে জহিরের মেডিকেল কলেজ বিরোধী আন্দোলনের মহড়া।