আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৪২ ধারার আইনি প্রয়োজন আছে। কারণ পুলিশের কাজ হলো, যদি অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে সেটা বন্ধ করা, অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে বিচারে সোপর্দ করা এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা। মন্ত্রী বলেন, বিচারে সোপর্দ করতে গেলে কিছু ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক সাক্ষ্য-প্রমাণ প্রয়োজন হয় এবং এই সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা তাদের দায়িত্ব। ওইখানে যদি পুলিশের হাতটা বেঁধে দেওয়া হয়, তাহলে তো তারা সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারবে না, কাজ করতে পারবে না। এমন এমন জায়গা আছে, যেখানে তাৎক্ষণিক অ্যাকশনের প্রয়োজন হয়। এ ধরনের ক্ষেত্রেই কেবল ৪২ ধারা প্রয়োগ করা হবে। শনিবার দুপুরে রাজধানীর বাংলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার -বিজেসির চতুর্থ সম্প্রচার সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে গিয়ে আনিসুল হক বলেন, ২০০৬ সালের আইসিটি আইনে ৫৭ ধারা যুক্ত করা হয়েছিল। এ ধারার বিষয়ে অনেক প্রশ্ন ও আপত্তি ছিল। আবার সাইবার স্পেস নিয়ন্ত্রণ বা সুরক্ষারও প্রয়োজন ছিল। এমন প্রেক্ষাপটেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছিল। এই আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য ছিল না- সাংবাদিক, সংবাদমাধ্যম বা স্বাধীন সাংবাদিকতা করার জন্য এটা একটা বাধা হয়ে দাঁড়াক। মোটেই এটা ইচ্ছে ছিল না এবং এটাও সত্য যে বাংলাদেশের সংবিধানে বাকস্বাধীনতা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার কথাটা একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে নিশ্চয়তা দেওয়া আছে। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে অপব্যবহার হয়েছে তা সরকার সবসময় স্বীকার করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাত হাজার একটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে এখন আছে পাঁচ হাজার ৯৯৫টি মামলা। এই মামলার শতকরা ৯৫ ভাগ দায়ের করেছে বাংলাদেশের জনগণ। এর মধ্যে হয়তো রাজনীতিবিদরাও আছেন। কিন্তু যখন দেখা গেলো, এই আইনের কিছুটা অপব্যবহার করা হচ্ছে, তখন কিন্তু সরকার এটা নিয়ে আলাপণ্ডআলোচনা করেছে। এরপর সারা পৃথিবীর বেস্ট প্রাকটিসগুলো সম্বন্ধেও সরকার জ্ঞাত হয়েছে। এরপর যখন দেখা গেছে আইনটিতে কিছুকিছু পরিবর্তন প্রয়োজন তখন সেটা নিয়ে কথা হয়েছে, সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়া তৈরির সময়ও আলোচনা হয়েছে। প্রথম দফার আলাপে সরকার এটাকে আরও সহজ করার চেষ্টা করেছে। এখানে যেসব যৌক্তিক আপত্তি পাওয়া গেছে, সেগুলো গ্রহণ করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, সাইবার নিরাপত্তা আইন করার সময় কারও সঙ্গে আলাপ করা হয়নি, কথাটি সম্পূর্ণ সত্য নয়। কেউ হয়তো বলতে পারেন তার সঙ্গে তো আলাপ করা হয়নি, অমুকের সঙ্গে তো আলাপ করা হয়নি। কিন্তু এই আইনের বিষয়ে ধারণা নেওয়ার জন্য কোথায় অসুবিধা হচ্ছে, কোথায় কী করতে হবে, সেসব কথা বলার জন্য কিন্তু আলাপণ্ডআলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, তারপরও যখনই আপত্তি উঠেছে, তখন আবারও আলাপণ্ডআলোচনা করেছি। যাদের সঙ্গে আলাপণ্ডআলোচনা করা হয়েছে তারা হলেন নির্বাচিত প্রতিনিধি। এরপর সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতেও আলোচনা হয়েছে। সেখানে বিএফইউজের বেশ কয়েকটি পরামর্শ গ্রহণ করা হয়েছে। মিথ্যা মামলার বিষয়ে তাদের যে পরামর্শ ছিল, সেটা নেওয়া হয়েছে। ২১ ধারার বিষয়ে বিএফইউজে থেকে যে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল তা গ্রহণ করা হয়েছে। এখন ৪২ ধারা নিয়ে একটু সমস্যা দেখা দিয়েছে। আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু সাংবাদিক নন, সর্বক্ষেত্রে যারা কর্মকর্তা, কর্মচারী ও কর্মী আছেন তাদের সবার নিজ নিজ অবস্থানের সুরক্ষা প্রদানের বিষয়ে খুবই সিরিয়াস। বিজেসির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক রাজার সভাপতিত্বে এবং একাত্তর টিভির প্রধান পরিকল্পনা সম্পাদক নূর সাফা জুলহাস ও সিনিয়র সাংবাদিক মুন্নী সাহার সঞ্চালনায় সম্মেলনের দুটি সেশনে সিনিয়র সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল, গ্লোবাল টিভির প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইসতিয়াক রেজা, অধ্যাপক ড. শফিউল আলম, এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক জয়-ই মামুন, এনটিভির বার্তা প্রধান জহিরুল আলম, একাত্তর টিভির বার্তা প্রধান শাকিল আহমেদ, নিউজ ২৪ এর নির্বাহী সম্পাদক রাহুল রাহা, ডিবিসির সম্পাদক প্রণব সাহা, চ্যানেল আইয়ের প্রধান বার্তা সম্পাদক জাহিদ নেওয়াজ খান ও সিনিয়র সাংবাদিক নজরুল কবীরসহ প্রমুখ সাংবাদিকতার নীতি, সুরক্ষা ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা করেন।