জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাটের আবাদ বেশি হলেও আশানুরূপ ফলন ও দাম কম হওয়ায় হতাশায় পড়েছে কৃষকরা। অতিরিক্ত শ্রমিকের মজুরিসহ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা পাট বিক্রি করে কাঙ্খিত দাম পাচ্ছেন না। সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ হওয়ায় স্থানীয় বেশির ভাগ ব্যবসায়ীই এবার পাট কিনছেন না। ফলে বাজারে পাটের দাম কমে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন প্রান্তিক পাটচাষিরা। অপরদিকে গতবারে পাটের দাম চলতি বছরের তুলনায় বেশি হলেও চলতি মৌসুমে পাটের মুল্য বেশি পাওয়ার আশায় মজুদ করে রাখলেও সেই পাট চলতি মৌসুমে বিক্রি করে বড় ধরনে লোকসানে পড়েছেন তারা।
পাঁচবিবি কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নে ১হাজার ৪শ ৬০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ২০ হেক্টর বেশি জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। গতবারের চেয়ে এবার পাটের দাম বেশি হবে এই আশায় কৃষকরা এবার বেশি জমিতে পাটচাষ করেছেন। উপজেলার বাগজানা, ধরঞ্জী, আয়মারসুলপুর বালিঘাটা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পাট জমি থেকে পাটকাটা, জাগ দেয়া, পাটকাঠি থেকে আঁশ ছাড়ানো,পাট শুকানোর কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। উপজেলার আয়মারসুলপুর ইউনিয়নের চড়া কেশবপুর গ্রামের কৃষক সায়েম উদ্দিন জানান, প্রতি বিঘা জমিতে পাট আবাদে বীজ-সার, কীটনাশক, নিড়ানি-পরিচর্যা, পাট কর্তন, জাগ দেয়া ও পরিবহনসহ মোট খরচ হয়েছে ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে পাট হয়েছে ৬ থেকে ৮ মণ, বাজারে প্রতি মণ পাট বিক্রি করেছি ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২শ টাকায়। পাটের দাম না থাকায় এবার লোকসান গুনতে হয়েছে। লাভের আশায় পাট চাষ করে যদি লোকসান হয়, তাহলে এ আবাদ আর করব না। বাগজানা ইউনিয়নের রামভদ্রপুর গ্রামের আসলাম হোসেন জানান, এবার বর্ষা মৌসুমে খালবিলে পর্যাপ্ত পানি না হওয়ায় পাট জাগ দিতে বিপাকে পড়েন তারা। অন্যের পুকুরের পানি ভাড়া নিয়ে পাট জাগ দিতে হয়েছে। একারণে পাট জাগ দেওয়া বাবদ অতিরিক্তি খরচ গুনতে হয়েছে। এ বছর পাট উৎপাদনে বিঘা প্রতি দ্বিগুণ খরচ হয়েছে। ধরঞ্জী গ্রামের গ্রামের বর্গাচাষি সিরাজুল ইসলাম বলেন, অন্যের এক বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। এবার কামলার সাথে আমি নিজেও হাড়ভাঙা খাটুনি দিছি। কিন্তু যে অবস্থা দেখছি, তাতে লাভ তো দূরের কথা, ঘরের টাকা ঘরে নেয়াই কঠিন হয়ে যাবে। শ্রীমন্তপুর গ্রামের পাটচাষী ফারায়েজ হোসেন বলেন, গত মৌসুমে পাটের দাম ২হাজার ৮শ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। এবার পাটের দাম আরো বেশি হবে আশায় বিক্রি না করে প্রায় ৫০মন পাট মজুদ করেছিলেন। কিন্তুু দাম বেশি হওয়া তো দূরের কথা বরং গতবারের চেয়ে এবার মন প্রতি ৮শ টাকা কম। এতে তিনি বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে পড়েছেন।
পাট অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের মুখ্য পরিদর্শক আবদুল হাকিম বলেন, জেলার দুই উপজেলায় বেশি পাটের আবাদ হয়। আর বাকি তিন উপজেলায় পাট চাষ কম হয়। গত বছরে কৃষকের অনেক পাট ব্যবসায়ী কেনার পর মজুত করার কারণে এ বছর পাটের দাম অনেক কম। গত বছরের অনেক পাট এখনো ব্যবসায়ীদের কাছে মজুত আছে। তাই ব্যবসায়ীরা এবার পাট কম কিনছেন।