ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে শ্রমিক রাজনীতি, যুব রাজনীতির পর এখন তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সিনিয়র সদস্য, দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি ছিলেন মুজিব বাহিনীর আঞ্চলিক কমান্ডার। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভয়াল কাল রাতে ঘাতকের নির্মম বুলেটের নিজের ছোট্ট শিশুপুত্র, বাবা, ভাই ও বোনসহ স্বজনদের হারিয়েছেন। সম্প্রতি সময়ে তিনি চিরদিনের জন্য হারিয়েছেন তার রাজনৈতিক প্রেরণার সবচেয়ে বড় উৎস শহীদ জননী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সহধর্মীনিকে।
এরপরেও নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে তিনি সর্বদা হাসি মুখে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পাশে রয়েছেন। দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি উন্নয়নে রয়েছে তার অগ্রনী ভূমিকা। তিনি দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের একমাত্র আশ্রয়স্থল। তাইতো দলমত নির্বিশেষে সকলের কাছে এখনও সম্মানের আসনে রয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে আলহাজ¦ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন গ্রাম হবে শহর। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়নের যে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে-তা শতভাগ বাস্তবায়নে শক্ত স্তম্ভ হয়ে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরীবিক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক (মন্ত্রী পদমর্যাদা) আলহাজ¦ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি। ফলশ্রুতিতে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি প্রত্যন্ত জনপদের রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, ধর্মীয় উপসানালয়সহ গ্রামীণ জনজীবনে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। এ কারণেই আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে বলা হয় বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের একমাত্র রূপকার।
বঙ্গবন্ধুর ছোট বোন আমেনা বেগমের জেষ্ঠ পুত্র আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। তার পুরো অবয়বে খুঁজে পাওয়া যায় স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিচ্ছবি। এমনকি মামার (বঙ্গবন্ধু) ন্যায় সকাল, দুপুর আর রাত নেই, যে যখন যেই কাজ নিয়ে তার (হাসানাত) কাছে আসুক না কেন, তিনি সর্বদা চেষ্টা করেন সকলের উপকারের জন্য। তাইতো আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে সাধারণ জনগন গরীবের বন্ধু বলে আখ্যায়িত করেছেন। তেমনি দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বলেন, তাদের একমাত্র অভিভাবক ও আশ্রয়স্থল হচ্ছে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ।
১১৯ বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য এবং পূর্ণমন্ত্রী পদমর্যাদায় থাকা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চীফ হুইপ নির্বাচিত হয়ে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে উন্নয়নের রূপকার হিসেবে আর্বিভূত হন। বরিশাল সিটি করপোরেশন, বিভাগ, শিক্ষা বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয়, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর প্রতিষ্ঠা, শেখ হাসিনা সেনানিবাস (ক্যান্টনমেন্ট), দোয়ারিকা, শিকারপুর, দপদপিয়া ও পয়সারহাট সেতু নির্মাণ, বিভাগীয় বেবী হোম, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, নার্সিং কলেজসহ অসংখ্য উন্নয়নে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের জন্য তিনি (আবুল হাসানাত) তার পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তি দান করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৬৮ সালের আগে জগন্নাথ কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর হাতেখড়ি। পরে তিনি বরিশালের শ্রমিক রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলে মুজিব বাহিনীর প্রধান ছিলেন আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। ১৯৭৩ সালে মাত্র ২৬ বছর বয়সে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বরিশাল পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। ১৯৭৪ সালে যুবলীগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি বরিশাল জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভয়াল কাল রাতে ঢাকার মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে ঘাতকের নির্মম বুলেটে শহীদ হন আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর বাবা তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী (বঙ্গবন্ধুর বোন জামাতা) আবদুর রব সেরনিয়াবাত, ভাই আরিফ সেরনিয়াবাত, বোন বেবী সেরনিয়াবাত, বড় পুত্র সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাত, চাচাতো ভাই সাংবাদিক শহীদ সেরনিয়াবাত। হামলার পূর্বে পরিবারের সবার অনুরোধে ঘাতকের চোখ ফাঁকি দিয়ে নিজের জীবন বাঁচিয়েছিলেন আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ।
সূত্রে আরও জানা গেছে, ১৫ আগস্টের হামলার পর আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। সেখানে (ভারত) চারবছর অবস্থানের পর ১৯৭৯ সালে দেশে ফিরে বরিশাল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৮৮ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি (হাসানাত) জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো বরিশাল-১ আসন থেকে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। ’৯২ সালের সম্মেলনে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ’৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-১ আসন থেকে দ্বিতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়ে তিনি চীফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেছেন। ওইসময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পার্বত্য শান্তি চুক্তি করেছেন। ’৯৮ সালে দলের সম্মেলনে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো বরিশাল-১ আসন থেকে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি নির্বাচিত হওয়ার পূর্বেই সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। পরবর্তীতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ বরিশাল-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে নিজ নির্বাচনী এলাকাসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে নিজেকে সর্বদা নিয়োজিত করেছেন।